• এসএসসি রেজাল্ট ২০১৯ । নাম্বার সহ এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পরীক্ষার ফলাফল ২০১৯Breaking News

    Wednesday, June 29, 2022

    New

    Hello what’s up guys কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভালো আছেন । সবাইকে স্বাগতম আজকের একটি নতুন পোস্টে । টাইটেল আর thumbnail দেখে already বুঝে গেছেন আজকের টপিক কি । আশা করি পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখবেন । তো বেশি কথা না বলে আজকের পোষ্ট শুরু করা যাক

    ভৌতিক রহস্য গল্প

    ওইখানে কে ?? ☠

    পার্ট ০১

    “বাবা বাবা দেখো ঐ বাড়ির আন্টিটা আমাকে ডাকছে।”
    ছয় বছরের ছেলে আবরারকে নিয়ে বেলকনিতে বল ছোঁড়া
    খেলছিলাম,হঠাৎ তাঁর কথাতে সেদিকে তাকালাম।আবরার আমাদের
    বাড়ির ঠিক অপজিটে রাস্তার ওপাশে থাকা পরিত্যক্ত বাড়িটার দিকে তার
    ডান হাতটা তুলে ধরে আছে।
    আবরারের কথামত বাড়িটার দিকে তাকালাম,পুরো বাড়িটা ঘুটঘুটে
    অন্ধকার।রাতে চাঁদের মিহি আলোতে আবছা ভাবে ঠিকমত
    বাড়িটাকেই ঠাওর করা অসম্ভব,সেখানে আমার ছেলে একজন
    নারীকে কিভাবে দেখলো?আর ও বাড়িতে তো কেউ
    থাকেও না,বাড়ি ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়ির মালিককে একবার জিজ্ঞাসা
    করাতে বলেছিলো,ও বাড়িতে কেউ থাকেনা।
    রাতের অন্ধকারে কি দেখতে কি দেখেছে বাচ্চা ছেলে।
    নিশ্চয় ভুল দেখেছে।
    আমি আবারারের দিকে তাকিয়ে বললাম,”বাবা ওখানে কেউ
    নেয়,আসো আমরা আবার খেলা করি।”
    কিন্তু আবরার আর খেলাতে মনোযোগ দিলো না,বরং জানালার
    গ্লাস ভেদ করে ঐ বাড়িটার দিকেই তাকিয়ে থাকলো ক্ষীণ
    দৃষ্টিতে।
    আমি কোনো উপায়ন্তর না দেখে আবরারকে নিয়ে রুমে
    চলে আসলাম।
    তারপর সবাই মিলে একসাথে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
    পরদিন সকালে বাপ বেটা নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম
    একসাথে।আগের বাসায় থাকতে আবরারকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া
    আর নিয়ে আসার জন্য একটা লোক রেখে দিয়েছিলাম।কিন্তু
    এখন আর সেটার প্রয়োজন নেই।কারণ আমার অফিসে যাওয়ার
    পথেই আবরারের স্কুল পড়ে।মূলত সেই জন্যই এই নতুন বাড়িটা
    ভাড়া নেওয়া।এখান থেকে আমার আর আবরার দুজনেরই
    যাতায়াতের সুবিধা।
    সুতরাং আবরারকে স্কুলে আনা নেওয়া করার জন্য আলাদা
    কোনো লোক বা আবরারের মা মানে আমার স্ত্রীকে
    বেগ পেতে হবেনা এখন থেকে।
    বাসা পরিবর্তন করার পর আজকেই প্রথম আবরারের স্কুল,তাই ও
    বেশ হাসি খুশি মনেই রেডি হয়ে আমার সাথে বেরিয়ে
    পড়লো।গাড়িতে ওঠার সময় একপ্রকার অনিচ্ছায় সামনের বাড়িটার
    দিকে নজর পড়লো আমার।
    বেশ বড়সড় একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি,গেইটের ওপাশে সরু কংক্রিট
    দিয়ে মোড়ানো রাস্তাটা সঠান বাড়ির আঙ্গিনা পর্যন্ত চলে
    গিয়েছে একবারে। সরু রাস্তার দু পাশ জুড়ে অযত্নে বেড়ে
    উঠেছে হরেকরকমের ফুলের গাছ সেই সাথে কিছু লতাপাতা।
    জনমানবহীন শখের বাড়িটা আজ যত্নের অভাবে পরিত্যক্ত হয়ে
    থাকলেও তার মান একটুও ক্ষুণ্ণ হয়নি এখনো,বরং সগৌরবে মাথা
    তুলে দাঁড়িয়ে আছে দৈত্যের মত করে।
    আবরারকে স্কুলে রেখে আমি আমার অফিসের উদ্দেশ্যে
    রওনা দিলাম।
    দুপুরের দিকে একটা জরুরি কাজ পড়ে যাওয়াতে নীলাকে
    ফোন দিয়ে জানিয়ে দিলাম,সে যেন আবরারকে স্কুল থেকে
    নিয়ে যায়।
    কথামত ড্রাইভারকে বলে গাড়িও পাঠিয়ে দিলাম।
    সন্ধ্যার একটু আগে ক্লান্ত শরীরে বাসায় ফেরার সময় আবারও
    বাড়িটার দিকে চোখ পড়লো আমার।পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়া
    সূর্যের রক্তিম আলোতে বাড়িটার সৌন্দর্যটাকে যেন আরও
    বেশি করে ছড়িয়ে দিতে চায়ছে।
    নিজের অজান্তে মনের ভিতরে একধরনের অস্বস্তিবোধ
    হতে লাগলো আমার।
    কেন জানি মনে হচ্ছে বাড়িটার সাথে আমার একটা অদৃশ্য টান
    আছে। বাড়িটার প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন আমাকে হাতছানি
    দিয়ে ডাকছে বারবার।
    কিন্তু এই বাড়িটাকে তো আমি কয়েকদিন হলো দেখছি,তাও আবার
    এই নতুন বাড়িতে উঠার পর থেকেই।
    এইসব ভাবতে রাস্তা পার হয়ে নিজের বাড়িতে ঢুকে পড়লো
    আমার গাড়িটা।
    ভিতরে গাড়ি প্রবেশ করতেই আবরার ছুটে এসে আবদার করে
    বললো, “বাবা আমার চকলেট?”
    আবরারকে দেখা মাত্রই হাতে থাকা ব্যাগ থেকে চকলেটের
    বক্সটা বার করে ক্লান্তিময় মুখে হাসি ফুটিয়ে বললাম,”এইযে আব্বু
    তোমার চকলেট।”
    আবরার চকলেটের বক্স পেয়ে আবার খেলতে চলে
    গেলো।দেখলাম আবরারের প্রায় সমবয়সী দু’জন ছেলে-
    মেয়েকে আবরার আমার দেওয়া চকলেট গুলা ভাগ করে
    দিচ্ছে।
    শহর থেকে একটু ভিতরের দিকে হওয়াতে বাড়ির সামনে বেশ
    খানিকটা জায়গা আছে,যা এখনকার বাড়িগুলাতে পাওয়ায় যায় না।
    ব্যাগটা নীলার হাতে দিতে দিতে বললাম,”ওরা কারা?”
    নীলা হেসে জবাব দিলো,”আমাদের প্রতিবেশির ছেলে-
    মেয়ে।তোমার ছেলেকে তো ভালো করে চিনো
    তুমি,ওর কথার যাদু দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করে ফেলে।
    আজকে পাশের বাসা থেকে দু’জন ভাবি এসেছিলো,তাঁদেরই
    ছেলে-মেয়ে।
    যাক ভালোই হলো,আবরারের তো দু’জন খেলার সাথি হলো কি
    বলো?”
    ,
    আমি শুকনো ঠোঁটে হেসে বললাম,”হুম,তবে এখন ভিতরে
    নিয়ে চলো।সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।”
    বলেই আবরারের সাথে যে দু’জন খেলছিলো তাঁদেরকে
    বললাম,”তোমরা আবার কালকে খেলো কেমন,আজকে সন্ধ্যা
    হয়ে এসেছে।এখন তোমরা তোমাদের নিজ নিজ বাড়ি চলে
    যাও।”
    আমার কথামত ওরা দু’জন চলে গেলে আমিও আবরারকে নিয়ে
    ভিতরে ঢুকে গেলাম।
    আবরার ওর আদরমাখানো গলায় বলতে লাগলো,”জানো বাবা ওরা
    না খুব ভালো।আমাকে আগে খেলতে দিছিলো।আমিও আমার
    চকলেট ওদেরকে দিয়েছি,খুব ভালো করেছি না বাবা?”
    আমি গাল টেনে একটা চুমু খেয়ে বললাম,”হুম খুব ভালো
    করেছো।আমার বাবা কি খারাপ করতে পারে।”
    তারপর আমি ফ্রেস হয়ে আসলে আবরার ওর নতুন বন্ধুদের
    সম্পর্কে নানা রকম গল্প শোনাতে লাগলো আমাকে।ওর নতুন
    বাড়ির সাথে বন্ধুদেরকেও খুব পছন্দ হয়েছে।
    ছেলের এমন কথাতে কিছুটা আস্বস্ত হলাম,কারন ছোট বাচ্চারা
    নতুন কোনো জায়গাতে গিয়ে যদি নিজেকে মানিয়ে নিতে না
    পারে বা পছন্দ না হয় তাহলে বিপদের শেষ থাকেনা।
    ধিরে ধিরে দিনের আলো একবারে হারিয়ে গিয়ে চারদিকে
    অন্ধ্যকার নেমে আসলো।
    রোজকার মত আজকেও আবরার বায়না ধরলো,বেলকনিতে
    গিয়ে বল ছোঁড়া খেলবে আমার সাথে।
    আমিও বাধ্য বাবার মত ছেলেকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বল
    ছোঁড়া খেলতে লাগলাম।
    রান্না ঘরে নীলা আর কাজের মাসি রান্না করছে,আর রান্না করার
    সময়টুকু আমিই আবরারের এই বদ অভ্যেসটা করিয়েছি,যাতে রান্নার
    সময় নীলাকে বিরক্ত না করে।
    বল ছোঁড়ার এক পর্যায়ে আবরার বল হাতে নিয়ে আমার পিছনে
    থাকা কোনো একটা জিনিসকে আগ্রহের সহিত দেখতে
    লাগলো।
    আমি বললাম,”বাবা বল দাও?”
    আবরার ঠিক গতকালের মত করেই ডান হাতটা উচিয়ে বললো,”বাবা
    ঐ আন্টিটা ডাকছে আমাকে।”
    আমি আবরারের মুখে কথাটা শোনা মাত্রই পিছন ঘুরে তাকিয়ে
    রাস্তার ওপাশে থাকা বাড়িটার দিকে তাকালাম।কিন্তু সেখানে ঘুটঘুটে
    অন্ধ্যকারের মাঝে সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা পরিত্যক্ত
    বাড়িটা ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না আমার।
    আমি আবরারের কাছে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিয়ে
    বেলকনিতে একদম পিঠ ঘেষে দাঁড়িয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে
    বললাম,”কোথায়, ওখানে তো কেউ নেই বাবা।”
    আবরার আমাকে অবাক করে দিয়ে আবারও তার ডান হাতের একটা
    আঙ্গুল দিয়ে কিছু একটা দেখানোর ভঙ্গি করে
    বললো,”ঐযে,ওখানে একটা আন্টি দাঁড়িয়ে আছে,ইশারা করে
    ডাকছে আমাকে!”
    আমি ওর হাতের দিকে ভালো করে লক্ষ্য করলাম,ও ঠিক ঐ
    বাড়িটার বেলকনিটাকে দউদ্দ্যেশ্য করে দেখাচ্ছে আমাকে।
    কিন্তু আমি তো ওখানে কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।
    আবরারের চোখের দিকে তাকালাম,সে বিস্ফিত চোখে
    সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
    দেখে মনে হচ্ছে সে চোখের ইশারাতেই ও বাড়ির
    বেলকনিতে থাকা কোনো একজনের সাথে কথপকথন চালিয়ে
    যাচ্ছে।
    আমি আর একমূহুর্ত না দাঁড়িয়ে সোজা রুমে নিয়ে চলে আসলাম
    আবরারকে।
    আবরার বার বার বলতে লাগলো,”বাবা আমি বেলকনিতে
    খেলবো,ঐ আন্টিটাকে দেখবো।”
    কিন্তু আমি ততোবারই আবরারকে অন্য কথা দিয়ে ভোলানোর
    চেষ্টা করতে লাগলাম,কিন্তু বাচ্চারা কি আর সেটা বুঝে।
    একসময় উপায় না পেয়ে ধমক দিতেই আবরার রান্না ঘরে কান্না
    করতে করতে দৌড়ে পালালো।
    এখন গিয়ে ঠিক নীলার কাছে আমার নামে বিচার দিবে।
    সেটাই হলো,একটু পর নীলা রান্না করার খুনতি হাতে করে
    বেরিয়ে আসলো।
    আবরার তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে বললো,”মা বকা দিচ্ছো না
    কেন,বকা দাও বাবাকে।”
    নীলা মুচকি হাসিটাকে আটকে রেখে জোর গলাতে
    বললো,”আমার আব্বুকে বকা দিছো কেন,তুমি খালি আমার
    সোনামনিটাকে বকা দাও,আজকে তুমি বাহিরে ঘুমাবে এটাই
    তোমার শাস্তি।কি এবার খুশি তো।”
    আবরার মুচকি হেসে বললো,”হুম।”
    রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবরার ঘুমিয়ে গেলে নীলা
    ড্রয়িং রুমে এসে আমার পাশে বসলো,তারপর বললো,”সারারাত
    টিভি দেখলে হবে?কাল সকালে তো সেই আমাকে আবার
    টেনে তোলা লাগবে।চলো ঘুমাবে চলো।”
    আমি নীলার দিকে তাকিয়ে বললাম,”আসলে আমি আবরারকে বকা
    দিতে চাইনি,তবে একটা জিনিস কি জানো।আবরার যখন আমার সাথে
    বেলকনিতে খেলা করে,তখন ও নাকি আমাদের সামনের বাসার
    বেলকনিতে একজন মহিলাকে দেখতে পায়,আর সেই মহিলা নাকি
    আবরারকে ইশারা করে ঐ বাড়িতে যাওয়ার জন্য ডাকে।”
    “তুমিও না,বাচ্চামি করার স্বভাবটা আর গেলো না।”
    “আরে সত্যি বলছি।গতকালকেও আবরার সেম কথা
    বলেছিলো,আমি তখন চোখের ভুল ভেবে বিষয়টাকে
    এড়িয়ে গিয়েছি।কিন্তু আজকে আমি যা দেখেছি,তা দেখে
    মনে হচ্ছে আবরার সত্যি সত্যি ঐ বাড়িতে কোনো একজনকে
    দেখতে পায়।আর সে আবরারকে ইশারা করে তার কাছে যাওয়ার
    জন্য ডাকে।”
    নীলা এবার আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,”কিন্তু
    ঐদিন না বাড়িওয়ালা বললো,ঐ বাড়িটাতে কেউ থাকেনা।মেলা বছর
    ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে বাড়িটা।”
    “হুম,প্রশ্ন তো সেখানেই।ঐ বাড়িটাতে যেহেতু কেউ
    থাকেনা,তাহলে আমাদের ছেলে ঐ বাড়িতে কাকে
    দেখে,আর কেই বা তাকে ইশারা করে ঐ বাড়িতে আসতে
    বলে,,,

    নীলার দিকে আঁড়চোখে তাকালাম,ওর চোখে মুখে যেন
    একধরনের অজানা বিভিষিকা চেপে ধরেছে। আমার ডান হাতটা শক্ত
    করে চেপে ধরে যেন আমার ভিতরে ঢুকে যেতে চায়ছে
    কোনো এক অজানা আতংকে।
    আমি ওর হাতের উপর বাম হাতটা রেখে বললাম,”আরে তুমি তো
    দেখছি রীতিমত ভয় পেয়ে গিয়েছো,আবরার ছোট মানুষ কি
    দেখতে কি দেখেছে। আর ঐ বাড়িটা তো মেলাদিন ধরেই
    বন্ধ হয়ে পড়ে আছে,তাহলে সেখানে মানুষ আসবে
    কোত্থেকে?”
    নীলা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”আশিক
    তাহলে কি ঐ বাড়িতে কোনো ভূত থাকে?”
    আমি তাচ্ছিল্যের সহিত হেসে বললাম,”আরে ধুর,কি বলো না
    বলো। তুমিও দেখি এখনো সেই মুরুব্বিদের মত ভূত-
    প্রেতে বিশ্বাস করে বসে আছো।ভূত-প্রেত বলতে কিছু
    হয়না,ওগুলো তো শুধু লেখকদের কলমের আঁচড়ে গড়া কিছু
    কাল্পনিক চরিত্র মাত্র।”
    নীলা আর কিছু না বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো,তারপর
    বললো,”আবরার একা একা রুমে আছে। চলো রুমে চলো।”
    আমিও আর কথা না বাড়িয়ে নীলার পিছন পিছন রুমে চলে আসলাম।
    আবরার ঘুমাচ্ছে,দু পায়ের মাঝখানে কোল বালিশটাকে আঁকড়ে
    ধরে ঘুমাচ্ছে।
    ঠিক আমার মত হয়েছে ছেলেটা,আমিও ছোট থাকতে, না শুধু
    ছোট থাকতে নয়, বিয়ের আগ পর্যন্ত আমার ঘুমের সাথি ছিলো
    ঐ কোলবালিশটা। পরে বিয়ের পর নীলা আসলে সেটার আর
    খাঁটে জায়গা হয়নি।
    একদিন মজার ছলে নীলাকে বলেছিলাম,কোলবালিশটাকে
    রেখে দিতে।
    তখন নীলা বলেছিলো,সে তাঁর খাটে কোনো সতিন রাখতে
    পারবে না।
    কি এক আজব প্রানী এই নারী জাতি তাই না?
    স্বামীর ভাগ কোলবালিশকেও দিতে চায় না।
    কি আর করার, বউয়ের মান রাখতে গিয়ে বেচারা কোলবালিশের
    জায়গা হলো সোজা খাট থেকে বাক্সের ভিতরে।
    কথাটা মনে হতেই নিজের অজান্তেই মুচকি হাসলাম,তারপর রুমের
    লাইট টা অফ করে দিয়ে আবরার আরেকপাশে গিয়ে সুয়ে
    পড়লাম।
    মাথার উপরে সিলিং ফ্যানটা বনবন করে ঘুরছে।
    রাতে সবাই বিশ্রাম নিলেও এ বেচারার কোনো বিশ্রাম নেই।
    অনেকের বাসায় শীতকালে একটু বিশ্রাম পেলেও আমাদের
    বাসায় বারোমাসই তাকে ঘুরপাক খেতে হয়।
    কারণ আমি আর নীলা দু’জনেই একরকম,যত শীতই আসুক না
    কেন ফ্যান ছেড়ে কম্বল মুড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাস আমাদের।
    ছেলেটাও হয়েছে আমাদেরই মত। সুতরাং শীতকালেও কম্বল
    মুড়িয়ে ফ্যান ছেড়ে দেওয়াটা আমাদের পরিবারের
    মুদ্রাদোষে দাড়িয়ে গিয়েছে এখন।
    চাদরটা গায়ে টেনে একবার ওপাশে তাকালাম,ডিম লাইটের
    আলোতে দেখলাম,নীলা চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে।
    মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছে।কিন্তু আমার কোনভাবেই ঘুম
    আসছেনা।
    বার বার আবরারের কথাগুলো মাথার ভিতরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
    ছেলেটা কি সত্যিই ও বাড়িতে কাউকে দেখতে পাচ্ছিলো
    তখন!! আর আবরার যদি দেখতে পায় তাহলে আমি কেন পাচ্ছিলাম
    না?আর যে বাড়িটা অযত্নে এতোদিন ধরে পড়ে আছে,সে
    বাড়িতে হঠাৎ করে মানুষ আসবে কোত্থাকে? আজকে
    বাড়িটাকে বাহির থেকে দেখেও তো নতুন কিছু মনে হয়নি।
    একটাবার আগামীকাল সময় করে বাড়িটাতে ঢুকতে হবে।
    হতেও তো পারে কেউ না কেউ লোকচক্ষুর আঁড়ালে ও
    বাড়িতে বসবাস করছে।
    কিন্তু আসপাশের কেউ তা জানে না। হ্যা আগামীকাল একটা বার ঐ
    বাড়িটার ভিতরে ঢুকে দেখতে হবে,আদৈও কোনো মানুষ ঐ
    বাড়িতে থাকে কি না।
    এসব ভাবতে ভাবতে দু’চোখে তন্দ্রা নেমে আসলো।পরদিন
    সকালে উঠে অফিসে যাওয়ার সময় রাস্তা পার হতেই ড্রাইভারকে
    বাড়ির গেইটের সামনে গিয়ে গাড়িটা থামাতে বললাম।
    গেইটে একটা মরিচাধরা তালা ঝুলছে,দেখে মনে হচ্ছে বিগত
    কয়েকবছর এই তালাতে কেউ হাত পর্যন্ত রাখেনি।জানালার কাচ
    নামিয়ে ক্ষীণ দৃষ্টিতে বাড়ির ভিতরের দিকটা দেখার চেষ্টা
    করলাম।
    বাড়ির সদর দরজাতেও ঝুলছে একটা তালা।
    যেখানে দুটো গেইটে তালা ঝুলছে সেখানে এই বাড়িতে
    কারো থাকার কোনো প্রশ্নই উঠেনা।
    তারপরও বাড়িটার দিকে তাকালে কেন যানি ভিতরটা খচখচ করে
    উঠছে।
    যেন বিগত কয়েকবছর ধরে এই বাড়িটা তার রহস্য খুলে বলতে
    চায়ছে কারো কাছে,কিন্তু তাঁর আর্তনাদ কারো কান পর্যন্ত
    পৌঁছাতে পারছেনা।
    “ড্রাইভার চলো।”
    ড্রাইভার আমাদের কথামত গাড়ি চালাতো লাগলো।খানিকটা এগিয়ে
    গিয়ে ড্রাইভার বললো,”স্যার একখান প্রশ্ন করুম,যদি আপনে কন
    তো?”
    আমি নড়েচড়ে বসে বললাম,”হ্যা বলো।”
    “স্যার আপনে হঠাৎ কইরা বাড়িটার সামনে গাড়ি থামাইবার কথা কইলেন
    যে কিছু কি হয়ছে?”
    আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বললাম,”না তেমন কিছু না,আসলে
    এতো সুন্দর একটা বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে তো তাই
    দেখার ইচ্ছে জেগেছিলো।”
    “ওহ আইচ্ছা। তয় বাড়িটা কিন্তু ভালা না,এই বাড়ি নিয়া এলাকার মানসের
    মুখে নানান রকমের কথা শুনা যায়।কেউ কেউ কয় এই বাড়িতে নাকি
    ভূত-প্রেত বাস করে।”
    আমি ধমক দিয়ে বললাম,”কি বলছো এসব,দেখছো না পাশে
    ছোট বাচ্চা আছে।আর ওসব ভূত-প্রেতের ভয় অন্যকাউকে
    দেখিও বুঝলে।এই তোমাদের মত লোকজনদের জন্যই এই
    বিংশ শতাব্দীতে এসেও মানুষের মনে ভূত-প্রেতের ভয়
    এখনো গেড়ে বসে আছে।
    যত্তসব মূর্খের দল।”
    আসতে করে কথাটা বলে,বললাম,”গাড়ি ছাড়ো।”
    ড্রাইভার আর কিছু না বলে চুপ থাকলো।
    লুকিং গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,তাঁর মুখে চাপা হাসি,সে হাসি
    কোনো সাধারণ হাসি নয়।যেন হাসির মাঝে হাজারো রহস্য
    লুকিয়ে আছে।
    সারাদিন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরতেই রোজকার মত
    আজকেও আবরার এসে চকলেটের আবদার করলো।
    আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ থেকে বক্সটা বার করে দিতেই
    আবরার আবার ওর নতুন বন্ধুদের সাথে খেলাতে মনোযোগ
    দিলো।
    একবার সেদিকে তাকালাম,দেখলাম আজকে আবরারে খেলার
    সঙ্গি আরও একজন বেড়েছে।একটা মেয়ে বাচ্চা,বাচ্চাটির
    গায়ের রং দুধে ধোওয়া।
    আমি হেসে বাড়ির ভিতরে ঢুকে নীলার হাতে ব্যাগটা দিতে
    দিতে বললাম,”আমাদের ছেলে যেভাবে প্রতিদিন ওর বন্ধুর
    সংখ্যা বাড়াচ্ছে,কিছুদিন পর দেখা যাবে আমাদের বাড়ির সামনের
    দিকটা ছোট খাট একটা খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।
    নীলা ব্যস্তভরে বললো,”আবার নতুন কাকে দেখলে তুমি?”
    আমি জুতা খুলতে খুলতে বললাম,”কেন বাহিরে যে
    দেখলাম,নতুন আরো একটা মেয়ে বাচ্চার আবরারের সঙ্গে
    খেলা করছিলো।”
    “নতুন বাচ্চা! কোথায় চলো তো দেখি।”
    কথাটা বলেই নীলা বাহিরে এসে এদিক সেদিক তাকিয়ে ভিতরে
    এসে বললো,”তুমিও না,তোমার মিছামিছি ভয় দেখানোর অভ্যাসটা
    আর গেলো না।
    কোথায় নতুন বাচ্চা? আবরারের সাথে তো গতকালকের ঐ বাচ্চা
    দুজনই খেলা করছে।”
    আমি খানিকটা থতমত খেয়ে দ্রুতগতিতে বাহিরে বের হয়ে এলাম।
    এসে দেখি আবরারের সাথে গতদিনে ঐ দুজন বাচ্চা খেলা
    করছে।
    আমি তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,”আবরার একটু আগে
    তোমার সাথে নতুন আরেকটা মেয়ে বাচ্চা খেলছিলো, সে
    কোথায় গেলো?”
    আবরার খানিকটা বিরক্তি ভরে বললো,”কোথায় নতুন মেয়ে
    বাবা,আমি তো এদের সাথেই খেলছি। আজকে কিন্তু সন্ধ্যা
    নামতে এখনো অনেক দেরি আছে,আমি এখনো খেলবো
    তুমি কিন্তু নিয়ে যাবে না আমাকে।”
    আমি বেশ খানিকটা অবাক হয়ে পাশের দু’জন বাচ্চাকে জিজ্ঞাসা
    করলে তারাও একই কথা বললো।তারা কোনো মেয়েকে
    দেখেনি এখানে।
    তাহলে আমি যে স্পষ্ট দেখলাম,আবরার আমার থেকে
    চকলেটের বক্সটা নিয়ে সোজা ঐ মেয়েটার হাতে দিলো।
    একটু চারপাশে তাকাতেই দেখলাম,আবরারের পাশেই
    চকলেটের বক্সটা পড়ে আছে।তাহলে কি আমি ভুল
    দেখলাম,কিন্তু এতবড় চোখের ভ্রম হওয়ার কথা তো নয়,আমি
    তো দিব্যি সুস্থ্য মস্তিষ্কে একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখতে
    পেলাম,সে আবরারের সঙ্গে খেলছিলো।
    মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে,আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।দ্রুত ভিতরে
    ঢুকে গেলাম।তাহলে
    নিজের চোখের ভুল এসব,সারাদিন আজগুবি সব চিন্তাভাবনার কারনে
    হয়তো ভুল দেখেছি।দ্রুত জামা কাপড় ছেড়ে সাওয়ার নিয়ে
    নিলাম।
    সারাদিনের অফিসের ক্লান্তি আর সকালের ড্রাইভারের উদ্ভট কথা-
    বার্তায় আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিলো।
    এখন বেশ হাল্কা লাগছে নিজেকে।
    সন্ধ্যার একটু আগেই আবরারকে ওর মা ভিতরে নিয়ে আসলো।
    আজকে রান্নার মাসি আসবে না বলে গিয়েছে।সুতরাং এই দীর্ঘ
    সময়টা আবরারকে ম্যানেজ করার দায়িত্বটা সম্পুর্ণ আমার ঘাড়ে
    এসেই পড়লো।
    ছেলের হোমওয়ার্ক শেষ করতে করতে রাত প্রায় নয়টা
    বেজে গেলো।আজ ইচ্ছে করেই একটু বেশি সময়
    লাগিয়েছি হোমওয়ার্ক করাতে গিয়ে।যাতে করে রাতে
    বেলকনিতে গিয়ে খেলার বায়না না করতে পারে ছেলেটা।
    নীলার রান্নার কাজ শেষ হয়ে গেলেই সবাই মিলে রাতের খাবার
    খেয়ে নিলাম।আগামীকাল শুক্রবার,আমার অফিস ছুটি।আর ছুটির
    আগের দিন রাতে আমি একটু রাত বাধিয়েই ঘুমায়।
    কারণ সপ্তাহে এই একটা দিন আমি ইচ্ছেমত টিভি দেখতে পারি।
    তবে আজকে কেন যানি টিভি দেখতে ইচ্ছে করলো না।
    খাওয়া দাওয়ার পর কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে আবরার ঘুমিয়ে পড়লে
    আমরা দু’জনেও তার দুপাশে সুয়ে পড়লাম।
    হঠাৎ করে কারো চিৎকারের শব্দে বিছানা ছেড়ে উঠে বসে
    পড়লাম মাঝরাতে।
    আবরারের ওপাশটা খালি,
    মুখ দিয়ে স্ব স্পষ্টে বেরিয়ে আসলো,” নীলা কোথায়?”
    বিদ্যুতের বেগে রুম ছেড়ে বাহির হতেই দেখলাম,নীলা ডাইনিং
    টেবিলের একপাশে অবচেতন হয়ে পড়ে আছে।
    আমি সেদিক ছুটে গিয়ে টেবিলের উপর থাকা জগ থেকে পানি
    ঢেলে নীলার চোখে ছিটকে মারতেই নীলার হুশ ফিরে
    আসলো।
    নীলা আমাকে দেখা মাত্রই শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে শক্ত
    করে চেপে ধরে কাঁপতে লাগলো।
    আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম,”কি হয়েছে তোমার,ঠিক আছো
    তো তুমি?আর এভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলে কেন?”
    নীলার মুখ দিয়ে কথা বার হতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো।
    খানিকটা সময় চুপচাপ থেকে ডুকরে কেঁদে উঠে
    বললো,”আশিক, আমি এ বাড়িতে থাকবো না।এ বাড়িতে ভূত
    আছে।”
    আমি নিজেকে শান্ত রেখে নীলাকে অভয় দিয়ে বললাম,”কি
    বলছো এসব?ভূত কোত্থায় দেখলে আবার।চলো তো
    রুমে চলো।”
    নীলাকে ধরে রুমে নিয়ে এসে খাটের উপর বসালাম।
    তারপর বললাম,”এখন বলো তো কি দেখে ওমনভাবে চিৎকার
    দিয়ে উঠলে?”
    নীলা কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,”একটু পানি খাবো।”
    আমার পাশে থাকা পানির বোতলটা দিয়ে বললাম,”নাও।”
    নীলা ঢকঢক করে বোতলের পুরো পানিটা পান করে কিছুক্ষণ
    দম নিয়ে তারপর বললো,”আমি ঘুম থেকে উঠে পানি পান করার
    জন্য ড্রইংরুমে গিয়েছিলাম।
    তারপর ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বার করে যেই না ফ্রিজের দরজা
    আটকাতে যাবো ঠিক তখনি….
    “তখনি কি?”
    “তখনি আমি একজন বিদ্ঘুটে চেহারার মহিলাকে দেখতে পাই।ঠিক
    আমার একদম চোখের সামনে।মুখটা ভয়ংকর, ফ্যাকাসে।দেখে
    মনে হচ্ছিলো যেন কেউ ওর শরীর থেকে সমস্ত রক্ত
    শুষে নিয়েছে।
    মেয়েটার চোখের ভিতর কোনো মনি ছিলো না,মনির কালো
    অংশের পরিবর্তে কেউ যেন সাদা চুনের প্রলেপ লাগিয়ে
    দিয়েছে।”
    “কি বলছো এসব পাগলের মত,আমি তো তোমার চিৎকার শুনে
    ছুটে গিয়ে কিছুই দেখতে পেলাম না।”
    “আমি কিছু জানি না,আমি আর এই বাড়িতে থাকবো না।নিশ্চয় এই
    বাড়িতে কোনো ঝামেলা আছে।আর সেইজন্যই এত বড় বাড়িটা
    বাড়িওয়ালা কম টাকা দিয়ে ভাড়া দিয়েছে।তুমি তো নিজেও
    গতকালকে বলছিলে আবরার কাকে যেন দেখেছে সামনের
    বাড়িতে।
    নিশ্চয় ঐ মহিলায় এসেছিলো।
    এ বাড়ি ছেড়ে দাও,মহিলাটা নিশ্চয় আমাদের ছেলের কোনো
    ক্ষতি করতে চায়ছে।”
    আমি নীলাকে বুকের উপর নিয়ে বললাম,”এখন ঘুমাও।সকাল
    হোক তারপর চিন্তা করে দেখা যাবে।”

    নীলাকে বুকের উপর নিয়ে এক প্রকার অনিচ্ছাসত্ত্বেই তাঁর বলা
    কথাগুলো একমনে আওড়াচ্ছি।
    নীলা হয়তো মিথ্যা বলেনি,প্রথমে আবরার তারপরে আমি আর
    একটু আগে নীলা।
    তবে কি সত্যিই আমাদের উপর কারো কুনজর পড়েছে?
    ধ্যাত এসব কি ভাবছি আমি,ভূত-প্রেতে অবিশ্বাস না করা আমিই কিনা
    এখন এসব নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে আছি।
    হয়তো এগুলো সত্যিই হচ্ছে।তবে এসব কোনো অদৃশ্য
    শক্তির বলে নয়,বরং কোনো মানুষের দ্বারায় পূর্বপরিকল্পিত
    ভাবেই এসব হচ্ছে।
    কিন্তু কে করছে,আর কেনই বা করছে?
    এখানকার তো তেমনভাবে কেউ আমাদের ঠিকঠাক মতো
    চিনে পর্যন্ত না।তাহলে কেউ কেন মিছামিছি ভয় দেখাতে এসব
    করবে?
    তাহলে কি সত্যি ঐ বাড়িটাতে লোকচক্ষুর আঁড়ালে কেউ থাকে?
    আমাকে জানতেই হবে,এ বাড়ি ছেড়ে দিলেও এসব কিছুর রহস্য
    উদ্ঘাটন করার পর তবেই যাবো।
    আগামীকালই আমি ঐ বাড়িটাতে যাবো,হ্যা আমাকে যেতেই
    হবে।
    এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত শরীরের ঘুম নেমে আসলো।
    সকালে নীলার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলে তাকালাম।
    বেশ স্বাভাবিক লাগছে নীলাকে,বরং অন্যদিনের চায়তে
    আজকে আরো বেশি মুক্তমনা দেখাচ্ছে তাকে।
    আমার দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো,”কি দেখছো
    ওমন করে,নতুন বউ না আমি,ওভাবে দেখার কিছু নেই। কাপটা ধরে
    আমাকে উদ্ধার করো। রান্না বসিয়ে এসেছি।”
    অমনোযোগের সাথে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে কাপটা ধরলাম।
    নীলা আঁড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুম থেকে
    বেরিয়ে গেলো।আমি ফ্যালফ্যাল চোখে নীলার প্রস্থান
    হওয়া দেখলাম।
    ভারি অদ্ভুত তো,রাতে যে মেয়েটার চোখ-মুখে গভীর ভয়
    গেঁড়ে বসেছিলো, সেই মেয়েটাকে দেখে এখন কিচ্ছুটি
    বুঝবার উপায় নেই।এমন একটা ভাব করে চায়ের কাপটা দিয়ে
    গেলো,যেন গতরাতে কিছুই হয়নি।সে কিছুই যানে না!
    নীলা কি তাহলে বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে চায়ছে?
    আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রুম থেকে বের হলাম।
    আবরার ড্রইংরুমে বসে বসে কার্টুন দেখছে।আমাকে
    দেখে ফিক করে হেসে আবার কার্টুন দেখাতে
    মনোযোগ দিলো।
    আমি ড্রইংরুম পার করে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।
    নীলা একা হাতে পুরো রান্নাঘর সামলাচ্ছে।একবার চুলাতে তো
    একবার সবজি কাটাতে ব্যস্ত।
    আমি দরজার মুখে দাঁড়িয়ে বললাম,”মাসি আসেনি?”
    নীলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উত্তর দিলো,”না,মাসির ছেলের নাকি
    নিউমোনিয়া হয়েছে,গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে।ফিরতে
    কয়েকদিন লেগে যাবে বললো ফোন দিয়ে।”
    “তাহলে আরেকজনকে দেখবো?”
    নীলা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”কয়েকদিনের জন্য
    খামখা কেন আরেকজনকে রাখতে যাবো।কয়েকদিনেরই
    তো ব্যাপার, আমি ঠিক সামলিয়ে নিবো।যে ভারি দুজন মানুষের রান্না
    করা।”
    “আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে,আচ্ছা শুনো বলছিলাম কি সামনের
    মোড়ে একটা ভালো বাড়ির খোঁজ পেয়েছি এইটার চায়তে
    বেশ ভালো।আমি চিন্তা করছিলাম সামনের মাস থেকে ঐ বাড়িতে
    উঠে যাবো,কি বলো তুমি?”
    নীলা এবার খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো,”দুদিন পর পর বাড়ি পরিবর্তন
    করতে তোমার ভালো লাগলেও আমার মোটেও ভালো
    লাগে না। তোমার আবার কি,বাড়ি ভর্তি ফার্নিচার,আর জিনিসপত্র তো
    তোমাকে সামাল দিতে হয়, লোক দিয়ে মালপত্র গাড়িতে
    উঠিয়ে আবার নতুন জায়গাতে গিয়ে নামিয়ে নাও।
    বাকি কাজগুলো তো সব আমাকেই করতে হয়।আর এ বাড়িটা কি
    এমন খারাপ,বেশ তো নিরিবিলি, ছিমছাম আর ভাড়াটাও কম। আর তাছাড়া
    আবরারেরও খুব পছন্দ হয়েছে বাড়িটা।এক বছরের আগে তো
    ভুল করেও বাড়ি বদলানোর নাম মুখেও নিবে না তুমি, এই বলে
    দিলাম।”
    নীলার কথাগুলো শুনে বেশ খানিকটা অবাক হলাম আমি,মেয়েটা
    বলে কিরে!! গতরাতে যে পারলে তখনি বাড়ি ছেড়ে
    পালাচ্ছিলো সে এখন বলে কিনা একবছরের আগে এ বাড়ি
    ছাড়লে আমার খবর আছে।
    আমি এবার বললাম,”গতরাতের কথা কি সব ভুলে গিয়েছো?”
    নীলা চোখ দুটি বড় বড় করে বললো,”কি কথা?”
    “আরে আজব তো,এমন একটা ভাব করছো যেন কিছুই জানো
    না।গতরাতে যেন তোমার সাথে কিছুই হয়নি?”
    “কি হবে আমার। এই তুমি ঠিক আছো তো?”
    “আমি ঠিক আছি,তোমার মাথাতে গন্ডগোল হয়েছে।গতরাতে
    তুমি কি না কি দেখে চিৎকার করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পরে
    আমি ছুটে গিয়ে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরালে তুমিই তো কাঁদো
    কাঁদো কন্ঠে বললে,” এই বাড়িতে ঝামেলা আছে,এই বাড়িতে
    আর থাকবে না।আর রাত শেষ হতে না হতে সবকিছু ভুলে
    গেলে?”
    নীলা এবার খুনতিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে বললো,”সকাল
    সকাল মশকরা করবা না একদম,কয়দিন ধরে দেখছি তুমি আজগুবি সব
    কথাবার্তা বলে আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছো।আমি
    গতরাতে বাহিরে কখন গেলাম,আর জ্ঞান হারালাম কখন?
    আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।দেখো ভুলভাল বকে একদম মাথা খারাপ
    করাবে না।এমনিতেই মাসি আসেনি,একা হাতে সবকিছু করতে হবে।
    যাও তো তুমি,আরেক কাপ চা নিয়ে যাও।
    খেয়ে যদি মাথাটা খুলে।”
    আমি আর কিছু বললাম না,চায়ের কাপটা রেখে চলে আসলাম।
    নীলা এসব কি বলছে!! গতরাতে তাহলে আমি যেসব
    দেখলাম,সেগুলো কি সব স্বপ্ন ছিলো? কিন্তু স্বপ্ন এতটা
    বাস্তবিক হয় কিভাবে?
    সকালের নাস্তা শেষ করে কাজের নাম করে বাহিরে বেরিয়ে
    পড়লাম।আসলে ঐ বাড়িটাকে একটাবার ভালো করে দেখার
    দরকার।নিশ্চয় ঐ বাড়িতে এমন কেউ আছে,যে এগুলো
    করাচ্ছে।
    বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার এপাশে এসে থমকে দাঁড়ালাম।
    বাড়ির মেইন গেইটে যেহেতু তালাবন্ধ,তাই প্রাচীর টপকিয়ে
    ভিতরে ঢুকলাম সাবধানে,যাতে কেউ টের না পায়।
    এমনিতেও এই তল্লাটে গোটাকয়েক বাড়ি,আর বসবাসকারী
    মানুষগুলাও তেমন জরুরী কাজ ছাড়া খুব একটা বাড়ির বাহিরে বার হয়না।
    প্রাচীর টপকিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম বাড়ির সদর দরজার
    দিকে।
    ছোট ছোট গাছ আর ঘাসের উপরে এখনো ভোরের শিশির
    লেপ্টে আছে।বাড়ির বাগানটা দেখে তো মনে হচ্ছে
    দীর্ঘ কয়েক বছরের ভিতরে এ বাড়িতে কোনো মানুষের
    পা পড়েনি।
    ধিরে ধিরে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একটা
    মজবুত তালা সদর দরজার দুপাশকে আবদ্ধ করে রেখেছে।
    যাকে বলে বিনা পারিশ্রমিকে দারোয়ানের দায়িত্ব পালন করা।
    তালা ভাঙ্গতে গেলে যদি শব্দ হয়ে এলাকাবাসী জেনে
    যায়,তাহলে তখন পড়বো আরো ঘোর বিপদে।হাজারো
    প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে তখন।
    ভাবলাম কোনো জানালার গ্লাস ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকবো।
    যেই ভাবা সেই কাজ,সদর দরজা ছেড়ে বাড়ির চারপাশ ঘুরতে
    লাগলাম।
    জানালার গ্লাসগুলোতে এত পরিমান ধুলো জমেছে যে হাত না
    দিলে ভিতরের কোনোকিছু দেখা প্রায় অসম্ভব।
    ঘুরতে ঘুরতে বাড়িটার পিছনের দিকে গেলে দেখলাম,একটা
    জানালার গ্লাস খানিকটা ভেঙ্গে গিয়েছে।
    সেই ভাঙ্গা অংশের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে জানালার লক খুলে
    সহসাই ভিতরে ঢুকে গেলাম।
    ভিতরে দমবন্ধ করা গুমট বেঁধে আছে,বাহিরে সূর্যের আলো
    থাকলেও গ্লাসের গায়ে জমাট বেঁধে থাকা ধুলোর কারণে
    ঠিকমত আলো ভিতরে ঢুকতে পারছে না।
    আবছা আলোতে একটাবার চারপাশটা ভালো করে দেখে নিলাম।
    আমি এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেইটা এই বাড়ির কিচেন।
    মেঝেতে ধুলোর মোটা আস্তরণ জমে গিয়েছে।
    ধিরে ধিরে এগিয়ে গিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে থমকে দাঁড়ালাম।
    জিনিসপত্র বেশ গোছানো থাকলেও সেগুলো এখন যত্নের
    অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী।মাকড়সার জাল আর ধুলোতে
    পুরো ঘরটা ছেয়ে আছে।
    এতো স্বাধের বাড়িটা আজ যত্নের অভাবে কি বেহাল দশাটায় না
    হয়েছে। কিন্তু একটা সময় তো ঠিকি এই বাড়িটাতে হাসির রল
    পড়তো,স্বপ্ন বুনতো কেউ কেউ।
    ড্রইংরুমে দাঁড়িয়ে আরো একবার ভালো করে চারপাশটা দেখে
    নিলাম,দেখে তো মনে হচ্ছে বহুদিন ধরে এ বাড়িতে
    কোনো জনমানবের ছায়া পর্যন্ত পড়েনি।
    তাহলে কেউ এ বাড়িতে থাকবে কিভাবে?
    একজন মানুষ নিশ্চয় এতোটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকবে না।
    বাড়ির রুম গুলোতে ঢুকার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হলো না,কারণ
    প্রতিটা রুমের দরজা লকড করা আছে।শুধু একটা রুম বাদ দিয়ে।
    যেটা খোলা ছিলো সেইটার দরজা কিছুটা ফাঁক করে বুঝলাম এই
    রুমটা এ বাড়ির স্টোররুম।ভিতরে ভাঙ্গা-চোরা আর অব্যবহৃত কিছু
    জিনিসপত্র পড়ে রয়েছে।অবশ্য এখন এ বাড়ির সবকিছুই
    অব্যবহৃত।
    বাড়িটা দোতলা,নিচের তলাতে একটা মাস্টার রুম,একটা স্টোররুম
    আর একটা কিচেন সেই সাথে বৃহদাকার এই ড্রইংরুমটা।
    ড্রইংরুমের একপাশ দিয়ে সরু হয়ে উপরে ওটার জন্য উঠে
    গিয়েছে আঁকাবাঁকা কাঠের একটা সিড়ি।সেটাতেও মোটা ধুলোর
    স্তুপ জমে আছে।ধিরে ধিরে এগিয়ে গিয়ে সিড়িতে পা
    রাখতেই শরীরের ভিতরে অজানা একটা হিমশীতল পানির
    স্রোত খেলে গেলো শিরদাঁড়া বেয়ে।
    একটা অদ্ভুত শব্দে থমকে দাঁড়ালাম।
    শব্দটা স্টোর রুম থেকে আসছে।
    কানদুটো সজাগ করে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শব্দটা
    ভালো করে বুঝবার চেষ্টা করলাম।
    কেউ যেন গোঙ্গানি দিচ্ছে,কিন্তু আমি তো একটু আগেও
    যখন দরজা খুলেছিলাম তখন ভিতরে ভাঙ্গাচোরা আসবাবপত্র ছাড়া
    কিছুই ছিলো না। পা টিপে টিপে আবার স্টোররুমের দিকে
    এগিয়ে গেলাম।
    দরজার এপাশ থেকে কান পেতে শব্দটা ভালোমত বুঝার চেষ্টা
    করলাম।
    মনে হচ্ছে দরজার ওপাশে কেউ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থাতে ছটফট
    করছে।
    সাতপাঁচ না ভেবেই দরজার হাতল ধরে টান দিলাম।
    ক্যাচ কুঁচ শব্দ করে দরজাটা খুলে গেলো।
    পকেট থেকে ফোনটা বার করে টর্চ ফেললাম,না কেউ
    ভিতরে নেই।
    টর্চের আলো এদিক সেদিক ভালো করে ফেলতেই
    দেখলাম দৈত্যকার কয়েকটা বিলেতি ইঁদুর আসবাবপত্রের উপরে
    ছোটাছুটি করছে।অনেকদিন পর দরজা খোলাতে মনে হয়
    তাঁদের সুখের সংসারে ব্যাঘাত ঘটেছে কিছুটা।
    নিজেই নিজেকে বিলাপ দিতে লাগলাম,সামান্য ইঁদুরের ভয়ে হাঁটু
    কাপা শুরু করে দিয়েছিলো যার,সে আবার এসেছে রহস্যের
    উদ্ঘাটন করতে।
    স্টোররুমের দরজা টেনে দিয়ে আবার সিড়ির দিকে এগিয়ে
    গেলাম।সিড়িতে পা দিতেই কানে এলো উপর থেকে পায়ে
    হাঁটার খটখট শব্দ। চুপচাপ খানিকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম,শব্দটা কয়েক
    মূহুর্তের জন্য হয়ে আবার থেমে গেলো।
    নিশ্চয় ব্যাটা উপরে আছে,আমার উপস্থিতি টের পেয়ে ধরা পড়ার
    ভয়ে পালাবার চেষ্টা করছে এখন।
    তাড়াহুড়ো করে উপরে উঠে গিয়ে আরো বেশি অবাক হলাম।
    নিচের তুলনাতে উপরে আরো বেশি ধুলোর আস্তর জমে
    আছে।একদম নিখুঁত ভাবে কোনোরকম খুঁত ছাড়াই ধুলো দিয়ে
    আস্তরন বিছানো পুরোটা ফ্লোর জুড়ে।
    আমি পায়ের ছাঁপ পরিক্ষা করার জন্য কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে পিছন
    ফিরে তাকালাম। মেঝের উপরে আমার জুতার ছাপ বসে
    রয়েছে। তাহলে একটু আগে যে হাঁটার শব্দটা আসছিলো তাঁর
    পায়ের ছাপ কোথায় গেলো?
    নিশ্চয় কোনো রুমের ভিতরে হবে। উপরের তলায় তিনটা রুম।
    একটা ছোট আর দুটো মাস্টার বেডরুম হবে সম্ভবত। একে
    একে গিয়ে সবকয়টার হাতল ধরে মোড়া মারলাম, একটা রুম
    খুললো বাকি দুটো লকড করা।
    ভিতরে ঢুকলাম,মাস্টার বেডরুম। বেশ বড়সড়।
    রুমের ভিতরে একটা বেড একটা ড্রেসিংটেবিল আর একটা
    ওয়ারড্রব ছাড়া আর কিছুই নেই।
    সেগুলোর অবস্থাও বড্ড নিদারুণ।
    ধুলোর স্তর জমে দামি আসবাবপত্র গুলো তার আভিজাত্য
    খোয়াতে বসেছে।
    রুমের বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম বেশ বড় সড় একটা
    বেলকনি,এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই চোখে পড়লো
    আমাদের বাড়িটা।
    তাহলে হয়তো এই বেলকনিটাতেই আবরার কাউকে দেখার কথা
    বলেছিলো?
    কিন্তু কেউ থাকলে তো তাঁর পায়ের ছাপ থাকতো,আর বেলকনি
    দেখেও তো মনে হচ্ছে এখানে বহুদিন কারো স্পর্শ
    পড়েনি।
    সব আমার মাথার সমস্যা,এসে থেকেই এই বাড়িটা নিয়ে এতটাই
    ভেবেছি যে, যে যা বলেছে সেটা নিয়ে ভাবতে শুরু করে
    দিয়েছি।
    আজকাল তো কতই পরিত্যক্ত বাড়ি পড়ে আছে,মানুষজনেরও
    খেয়ে দেয়ে কাজ নেই একটা পরিত্যক্ত বাড়ি দেখলেই
    হয়ছে, নানান গুজব রটিয়ে এলাকা বাসির মনে ভয়ভীতি ঢুকিয়ে
    দিবে।
    মনটা এখন বেশ হাল্কা লাগছে,নিজে সঠিক এটা ভেবে।ভূত
    প্রেত বলতে কিছু নেই।সবকিছু মানুষের বানানো রটনা মাত্র।
    বেলকনির দরজা দিয়ে রুমের ভিতর দিয়ে বের হওয়ার সময় হঠাৎ
    করে চোখ আটকে গেলো দেওয়ালে ঝুলতে থাকা একটা
    ফটোফ্রেম দেখে।
    একটা ফ্যামিলি ফটোফ্রেম,এক ফ্রেমে তিনজন আবদ্ধ হয়ে
    আছে।
    বাবা-মা আর তাঁদের ছোট্ট একটা মেয়ে।
    মেয়ে!! মেয়েটার চোখ দুটো দেখে খানিকটা খটকা
    লাগলো আমার।
    এই চোখ দুটো কোথায় যেন দেখেছি আমি।
    তবে ধুলো পড়ার কারণে মুখটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছিনা।
    এগিয়ে গিয়ে ফ্রেমটা নামিয়ে বাচ্চা মেয়েটার উপর থেকে
    ধুলো ঝেড়ে ফেলে দিতেই হৃদপিণ্ডটা যেন একমুহূর্তের
    জন্য কেঁপে উঠলো আমার!!
    হাত থেকে ফ্রেমটা পড়ে গিয়ে কাচ ভাঙ্গার শব্দে ঝনঝন
    করে উঠলো পুরো বাড়িটা।
    মেঝের উপরে পড়ে থাকা ফ্রেমের বাচ্চা মেয়েটা আর
    কেউ নয়,গতকাল বিকেলে অফিস থেকে ফেরার সময়
    আবরারের সাথে যাকে খেলতে দেখেছিলাম এটা সেই
    মেয়েটা!! ঠিক একইরকম ভাবে হাসছিলো, যেভাবে এই
    ফ্রেমের ভিতরে হাসছে!! তাহলে কি এই মেয়েটাকেই
    আবরার দেখতে পায়,কিন্তু আবরার তো বলেছিলো তাকে
    একজন আন্টি ইশারা করে ডাকে।
    আর বাড়িওয়ালার কথামত যদি এ বাড়িটা দশ বছরের বেশি সময় ধরে
    পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে,তাহলে এতো বছর পরও মেয়েটা
    একইরকম থাকে কিভাবে? কোনোকিছু আর ভাবতে
    পারছিনা,আমাকে এখন বের হতে হবে।
    ফ্রেমটাকে ফেলে রেখে দ্রুত হাঁটা শুরু করে দিলাম।নিশ্চয়
    কোনো গন্ডগোল আছে এই বাড়িটাতে।

    .বাকি পার্ট
    পরের অংশে

    পরের পার্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    তো আজকে এই পর্যন্তই । মানুষ মাত্রই ভুল হয় । তাই ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়েন । আশা করি পোস্টটি সবার ভালো লেগেছে । কোনো কিছু না বুঝতে পারলে কমেন্টে জানান । আপনি চাইলে এই লিংক এ ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে join করতে পারেন । আর যেকোনো প্রয়োজনে ফেসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন ।




    The post নিয়ে নিন একটি চমৎকার ভৌতিক গল্প [প্রথম অংশ] appeared first on Trickbd.com.



    from Trickbd.com https://ift.tt/JY49ruq
    via IFTTT

    No comments:

    Post a Comment

    Fashion

    Beauty

    Travel