Hello what’s up guys কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভালো আছেন । সবাইকে স্বাগতম আজকের একটি নতুন পোস্টে । টাইটেল আর thumbnail দেখে already বুঝে গেছেন আজকের টপিক কি । আশা করি পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখবেন । তো বেশি কথা না বলে আজকের পোষ্ট শুরু করা যাক গল্পের নাম : আত্মবিশ্বাস।
আহ্ঃ.. ব্লেড এর আঁচড়ে ছিড়ে গেলো আবিরের হাত। না আর নয় আর যে পারছি না ….আঃ আঃ মা গো। আরেকটি ব্যর্থ দিন এর সমাপ্তি। মা মরা ে বাবা যেন থেকেও নেই, মেশার মতো মানুষ নেই। নেই বন্ধু বান্ধবী। পূর্বে গুঞ্জন বেশি হওয়ায় মোটা বলে আজ কারো কাছে পাত্তা নেই কালো বলে কেউ তাকে মানুষ বলে গণ্য করে না। নাজিহা
‘আই আই তুই আবার হাত কেঁটেছিস? তোকে না বলেছি এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি না?’ আবির
‘কী করবো? কষ্ট দেয়ার ও তো কেউ নেই তাই নিজেই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি।’ ‘কেন তোর খুব কষ্ট দরকার?’
‘আমার কষ্ট কি আছে রে? আমার কি জীবন আছে? প্রতিদিন এক ঘরেই
জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি। কে আছে আমার? বল?’
‘তোর কী হয়েছে বলবি?’ ‘না রে কিছুই হয়নি। হঠাৎ?
‘তোর হাতের দিকে খেয়াল করেছিস? রক্তে পুরো বাড়ি ভেসে গাছে ভাই তুই কি পাগল না ছাগল? আমি এতিম অসহায় এক ব্যাক্তি। যার জীবনে কিছু পাওয়া নেই। আচ্ছা নাজিহা তোরও তো বন্ধু বান্ধবী আছে তাই না?
‘থাকবে না কোনো? আমার কেনো নেই বলতে পারিস? (নাজিহা কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না) আচ্ছা আমার বাবা কেন একজন পাপী মেয়েকে বিয়ে করলো? সেই মেয়ে কি ভার্জিন? এরকম এক মেয়েকে বাবা কেন বিয়ে করলো? বাবা কেন মা’কে এভাবে হত্যা করলো? আমার কথা কি বাবার একবারও মনে পড়েনি?
‘যাই হোক রাত ২টা বাজে অনেক হলো এবার যা ঘুম দে একটা আরামসে সকালে ক্লাস আছে তো আমি ক্লাস করে কী করবো? কলেজেই বা কেন যাবো?’ ‘তোকে সুন্দর মতো পড়াশুনা করতে হবে। দেখবি ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেলে সবাই দৌড়ে ছুটে তোর পেছনেই ঘুরবে বলছিস? কথাটা মিলিয়ে নিস।’ ‘ঠিকাছে মিলিয়ে নিবো।’
‘যাচ্ছিস? আরেকটু থাক? তুই বাদে আর তো কেউ নেই আমার…. ‘এখানে আমাকে দেখলে বাবা মেরে ফেলবে এমনিই আমি রাত দুইটায় এসেছি।’
‘আচ্ছা যা … শাড়িতে সেই লাগছে তোকে।’ ‘পাইছে একটা ডায়ালগ।’
‘হাহা…।’
শাড়ির আঁচলটা আবিরের মুখের উপর ভাসিয়ে দিয়ে দৌড় দিলো নাজিহা। নাজিহার পারফিউমের গন্ধে আবির এর রুম ভোরে গেলো আহ্হ্হঃ কত্ত সুন্দর নাজিহা। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো কী সুন্দর করে বান্ডিজ করে দেয়া আছে। নাজিহা কত্ত সুন্দরী কত্ত বুদ্ধিমতী। নাজিহার কথা ভাবতে ভাবতে চোখ বুজলো আবির।
পরেরদিন সকালে ঘুম ঠিক উঠলো আবির আঃ আআ ঘাড় মর মর করে উঠলো। দুইদিন আগে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল আবির ভাগ্যকর্মে নাজিহার কল্যানে মেয়ে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে আবির। মাঝেমাঝে মনে হয় আবির এর তার বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ বোধয় নাজিহা। আরেকটু ঘুমাই না হয় মাত্রই তো ৬টা বাজে ।
‘এই কী হলো? হঠাৎ কে জানি আবিরের মুখে এক বালতি পানি ফেলে বসলো কেরে? ঘুম কাটলো?’
‘নাজিহা? তুই কী করিস?’ ‘মর্নিং ওয়াক এ যেতে হবে।’
‘আমি কেন যাবো?’
‘শরীর এর কী হাল দেখেছিস? নিজেকে একবার দেখে নিলো আব্রি পেটটা
অনেক বেড়ে গিয়েছে।’
‘কী? কদিন পড়তো আইল্যান্ডে তালগাছ ও দেখতে পারবি না…।’
‘মানে?’
‘ইফ ইউ নো হোয়াট আই মিন ।’
‘শয়তান! শালীইই।’
‘হাহাহা! তাল গাছের ঘাস ফেলসেন তো?’
“মানে? তালগাছে ঘাস আসবে কোত্থেকে? মানে না বুঝলে কী আবার? ধুর
আবার শুরু হইসোস?’
‘হাহা! যাইহোক নবাবজাদা এবার গেঞ্জি পরে নিন।’ ‘ঠিকাছে চল।’
আবিরকে হাত ধরে উঠতে সাহায্য করলো স্যান্ডেল পরে আবির বের হয়ে যেতে
চাইলো। ‘এই পাগল?’
‘কী?’
স্যান্ডেলে পরে কেউ ব্যায়াম এ যায়?’ “যায়। স্নিকার্সটা পরে নেয়া ভালো।
‘বলদ!’ আচ্ছা আচ্ছা পড়ছি স্নিকার্স তা পরে নিলো আবির। কিন্তু সে তো
আর ফিতা বাঁধতে পারে না।
‘এত বড় ছেলে কলেজ এ পরে কিন্তু ফিতা বাঁধতে পারে না। আল্লাহ! নে আমি দিচ্ছি।’ আবিরের জুতার ফিতা সুন্দর করে বেঁধে দিলো নাজিহা।
‘এবার চল।’
‘আচ্ছা তুই কোথায় যেতে চাচ্ছিস? জিয়া উদ্যান পুরোটা হাঁটবো?’
‘জি।’
‘আর আমরা রিকশা নিবো না পুরোটা হেঁটেই যাবেন হেঁটেই আসবেন?’
‘মানে? জি? তাই?’ “জি তাই।’
‘তুই এত জ্বালাস।’
“ধুর শুকাতে হবে মামা শুকাতে হবে আচ্ছা চল যত্তসব ভাওতাবাজি।’ হঠাৎ আবিরের পা খানিকটা পিছলে গেলো।
‘আইই গাধা! ঠিকমতো দেখে হাঁটতে পারিস না?’ ‘পারবো না কেন?’
“তাইলে পিছলে গেলি কেন?’
‘না মানে কিয়ে বলবো।
‘হইছে আর বলা লাগবে না বুঝছি তোর মন অন্য কোথাও।’
‘না সেটা না।’
‘হাত ধর আমার।’
‘তোর হাত?’
‘ধর তো।’
‘আচ্ছা।’
‘এবার উঠ চল রোদ উঠে গেলে আর মজা লাগবে না।’
‘উঃ কী শীত!’
‘আরেহ এটাই তো সকালের মজা।’
‘আচ্ছা এবার কই যাবি?’
‘চল জিয়া উদ্যানে হেঁটে আসি?’
‘এত দূর?’
‘দূর কই? সেন্ট জোসেফ থেকে একটু পাশেই তো রেসিডেন্সিয়াল পার
হয়ে।’
‘এত হাঁটবো?’
‘মাত্র ১ কিলো রাস্তা….!
‘আচ্ছা চল।’
‘১০ মিনিট পর ওরা জিয়া উদ্যান পৌছুলো।’
‘কী? কতক্ষণ লাগলো?’
‘১০ মিনিট।’
‘অন্য সময় তো ৩০ মিনিটও আপনি হাঁটেন না!’
‘কী জানি আজকে মন কেমন জানি হাঁটিহাঁটি পা পা করছে।’
“জি না।’
‘তাইলে?’
‘সকালে আপনি এখন ভুঁড়িতে খাবার ঢুকান নাই আর সকাল এর এনার্জিরও
একটা মূল্য আছে তাই না??
‘তুই এত জ্বালাস।’
“ধুর শুকাতে হবে মামা শুকাতে হবে আচ্ছা চল যত্তসব ভাওতাবাজি।’ হঠাৎ আবিরের পা খানিকটা পিছলে গেলো।
‘আইই গাধা! ঠিকমতো দেখে হাঁটতে পারিস না?’ ‘পারবো না কেন?’
“তাইলে পিছলে গেলি কেন?’
‘না মানে কিয়ে বলবো।
‘হইছে আর বলা লাগবে না বুঝছি তোর মন অন্য কোথাও।’
‘না সেটা না।’
‘হাত ধর আমার।’
‘তোর হাত?’
‘ধর তো।’
‘আচ্ছা।’
‘এবার উঠ চল রোদ উঠে গেলে আর মজা লাগবে না।’
‘উঃ কী শীত!’
‘আরেহ এটাই তো সকালের মজা।’
‘আচ্ছা এবার কই যাবি?’
‘চল জিয়া উদ্যানে হেঁটে আসি?’
‘এত দূর?’
‘দূর কই? সেন্ট জোসেফ থেকে একটু পাশেই তো রেসিডেন্সিয়াল পার
হয়ে।’
‘এত হাঁটবো?’
‘মাত্র ১ কিলো রাস্তা….!
‘আচ্ছা চল।’
‘১০ মিনিট পর ওরা জিয়া উদ্যান পৌছুলো।’
‘কী? কতক্ষণ লাগলো?’
‘১০ মিনিট।’
‘অন্য সময় তো ৩০ মিনিটও আপনি হাঁটেন না!’
‘কী জানি আজকে মন কেমন জানি হাঁটিহাঁটি পা পা করছে।’
“জি না।’
‘তাইলে?’
‘সকালে আপনি এখন ভুঁড়িতে খাবার ঢুকান নাই আর সকাল এর এনার্জিরও
একটা মূল্য আছে তাই না??
‘যাই হোক এবার জগিং শুরু করুন ১-২-৩১-২-৩’
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে নাজিহার পিছে ছুটলো। মনে মনে তার খুব ভালো লাগছিলো। সামনে প্রকাশ না করলেও সে অনেক খুশি ছিল অন্তত নাজিश তো আছে তার জীবনে।
নাজিহা
‘এবার চল স্ট্রেচিং করি।”
‘স্ট্রেচিং করতে গেলে তো আমার কোমর ব্যথা হয়ে যাবে।’
‘আমার সাথে সাথে কর কিচ্ছু হবে না।’
‘আচ্ছা।’
‘এত্ত প্রথমে হাত দুইটা পিছে রেখে একটা টান দে।’
‘এইত্ত সাব্বাশ। এবার পা উঠিয়ে মাথার পিছে রাখ।
‘এই বলদ।’
‘এটা আমার দ্বারা হবে না।’
‘কেন হবে না?’
‘হবে না মানে হবে না??
‘আচ্ছা পা আমাকে দে।
‘আবির পা বাড়িয়ে দিলো।
‘এবার একটু একটু করে পা পিছনে নিয়ে জাস্ট একটু বাঁকা করবি এইত্তও
সাব্বাশ।
‘আরেহ!’
‘বলেছিলাম না পারবি!’
‘এবার তুই পা দুটো সামনে নিয়ে হাত দিয়ে আঙুল দুইটা টাচ করার চেষ্টা
কর।’
‘আচ্ছা ঠিকাছে।’
‘এটা পারবো না ভুঁড়িরই কারণে।’
‘আজকের মতো চল যাই ৮ টায় ক্লাস আছে।’
“আচ্ছা চল।’
যেতে যেতে ওরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা সেরে নিলো পরেরদিনের ব্যাপারে।
‘আচ্ছা তুই আজকে থেকে আমি যা বলবো তাই খাবি এর বাহিরে কিচ্ছু
না।”
‘কেন? তুই কি এখন খাইতেও দিচ্ছিস না??
‘আগে তো চল বাসায়।’
‘আচ্ছা চল।’
‘এবার বল কী খাবো?
‘এইযে নেয়া গরম পানি দিয়ে লেবুর পানি আর সকাল এ খালি একটা রুটি একটা ডিম সিদ্ধ আর একটু দুধ খাবি।’
‘এটুক?’
‘ইস্সিরে যেই ছেলে গতকাল মরতে বসছিলো তার আবার শখ আহ্লাদের খাওন এগুলো তোর শান্তি।’
“আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি কলেজ এ যা।”
কলেজ আবির এর কাছে জেলখানা মনে হতো। সবসময় সে কলেজকে ঘৃণা করতো। না ছিল কোনো বন্ধু না ছিল কোনো কেউ। রোজকার মতো কলেজে শিক্ষকদের পড়া শুনে বাড়ি ফিরে এলো। এসে দেখলো টেবিল এ একটি চিরকুট লেখা আর খাবার দেয়া। “এইযে মিস্টার আজকে ঠিক এক পিএস মুরগি একটু ডাল দিয়েই খাবেন এর
চেয়ে বেশি কিছু না কিন্তু।”
আবির এর কাছে সব যন্ত্রণা লাগলো!
বিকেলে নাজিহা ফিরেই আবির এর ঘরে গেলো ।
‘কিরে কী খবর।’
“তোর জ্বালায় আর তো বাঁচি না।’
‘একদিনেই এই অবস্থা?’
‘তো কি রোজ এভাবে চলবে??
‘একটু আসতো ওয়েট মেশিন এ ।’ ‘এসে?’
“আরেহ আয় তোহ।’
‘আচ্ছা এইযে দাঁড়ালাম।’
‘১২৫ কেজি! তুই কি ভালুক না অন্যকিছু?’
‘বাজে বলবি না।’
‘আচ্ছা যা যা বললাম না বাজে কিছু।’
‘আচ্ছা রাতে রুটি আর ভাল পাঠিয়ে দিবো খেয়ে নিশ ‘ধ্যাৎ আর ভাল্লাগে না।’
“ওকে টাটা ক্লিক সকালে দেখা হবে থাকিস কিন্তু।’
বিরক্ত হয়ে আবির রুটি খেয়ে নিলো।
রাতে সবার সময় আবারো তার মন খারাপ হয়ে গেলো সে আবার তার মা বাবার কথা ভাবতে লাগলো। বাবা তুমি কি আমাকে ভালোবাসতে না? মাকে কেন তুমি মারলে? আর কেউ জানুক আর না জানুক আমি তো জানি আমার মাকে তুমি মেরে ফেলেছিলে। কেন বাবা? কেন? আমার কথা কি একটি বারো তোমার মনে হয়নি? এতো নিষ্ঠুরতম কাজ তুমি কিভাবে করলে বাবা? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে আবির ঘুমিয়ে গিয়েছিলো তার মনেও নেই সকাল হলো আবির এবার নিজেই উঠে পড়লো
‘আরেহ বাহ্ নবাব দেখি নিজেই উঠেছেন!’
‘কেন আমি কি নিজে উঠতে পারি না?”
‘জি জি পারেন পারেন।
‘চল যাই।’
“আচ্ছা চল।’
আগেরদিনের থেকে বেশ ভালো স্পিড পেলো আবির স্ট্রেচিং করতেও আগের দিন থেকে ভালো ফিল করছে। পায়ের এগুলি ছুঁতে পারছে কিছুটা কাছে এসে। ঘরে ফিরে আসার পর সেবা দেখলো করলার জুস।
‘আরেহ এটা কী?’
‘জি আজকে আপনি করলার ভাজি দিয়ে রুটি আর করলার জুস খাবেন।’ ‘মানে কী ভাই?’
‘আমি ছেলে?’
‘না তুই একটা….।’
‘কী?’
‘থাক আর বললাম না।’
‘রাগ করেন বাবা শোনা তোমার ভুঁড়ি তো কমাতে হবে। সাহস করে একবার মেশিন এ দাড়ালো। ৭৫ কেজি! মানে? ১২৫-৭৫….তিন মাসে ৫০ কেজি! এটা সত্যি না স্বপ্ন নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলো না আবির। কি? ৫০ কেজি কমেছে?’
পিছনে তাকিয়ে আবির দেখলো শাড়ি পরা নাজিহাকে। কী যে সুন্দর লাগছে। আবিরের যেন নাজিহার দিকে তাকিয়ে থাকতেই মন চাচ্ছে তারউপর ও আজ শাড়ি পরে এসেছে। কী অপরূপ। কী সুন্দর গোলাপি লিপিস্টিক। কী সুন্দর পারফিউমে ভরে উঠলো রুম।
আবির নিজের মধ্যে নাজিহার জন্যে ভালোবাসা অনুভব করলো। এই তিন মাসে
নাজিহার জন্যে তার মন কম টানেনি। “জি ৫০ কেজি কমেছে।’
‘সত্যি?’
‘দেখেন!’ ‘আলহামদুলিল্লাহ।’
আবির কেঁদে নাজিহাকে জড়িয়ে ধরলো ।
‘এই ছাড় ছাড় আমি না খারাপ আমাকে কেন ধরলি?’
‘না তুই খুব ভালো।’
‘দেখলি? একটু কষ্ট করলেই মানুষ সব পারে? অসম্ভব কিছু না। আর চাইবি মরতে? আর কখনো বলবি? জীবনে কিছু অসম্ভব না।’ আবির কেঁদে বললো,
না আর কখনো এমন বলবো না।’ ‘আয় বুকে আয়।’
আবির পরম মমতায় নাজিহাকে জড়িয়ে ধরলো। ‘এবার চল ছাদে তোর কয়েকটা ছবি তুলে দেই সবাই দেখবে আর পটবে।’
‘আমি মেয়ে পটাবো?’
‘আরেহ তোকে দেখে আমিই তো ফ্লাট খেয়ে গেছি। চল আমি পোজ
দেখিয়ে দিবো।’ ছাদে আবিরকে পাঞ্জাবি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো নাজিহা। ক্যান্ডিড পোজে বসে কচু গাছের সামনে ভিন্ন ধরনের পোজ দেখালো
‘আরেহ কচু গাছের সামনে বস। পা’টা একটু ভেঙে বস। হচ্ছে না হচ্ছে না
মুখটা একটু সুন্দর কর হাসি দে।’ ‘আরেহ পাগল এভাবেই বলেছি।’
“উমমম হিইইই।’
এরকম খুনসুটিতে মেতে আবিরের অনেক সুন্দর ছবি তুলে দিলো নাজিহা।
‘শুন এই ছবির ক্যাপশন দিবি- কচু গাছের সামনে হাহা ।। “আচ্ছা যাহ এটাই দিবো।
ফেইসবুকে আবিরের কোনো মেয়ে বান্ধবীকে ছিলো না। নতুন প্রোফাইল ছবি
দেখে ক্লাস ও কলেজের সব মেয়েরা ওকে একটিবার দেখার জন্যে ফ্রেন্ড
রিকোয়েস্ট দিলো। আবির সানন্দে সেগুলো একসেপ্ট করলো। একেকজনের কমেন্ট— সুন্দর! হট! দারুণ ফিগার! এই ধরনের এপ্রিসিয়েশন পেয়ে আবির যেন আবার নিজের জীবন ফিরে পেলো আবার যেন নিজেকে চিনতে শিখলো আবার যেন নিজেকে বুঝতে শিখলো।
‘কী? দেখলাম অনেক মেয়ে এক্কেবারে ইম্প্রেসেড!
‘হেহে ভালোই লাগছে মন ফুরফুরে লাগছে।’ ‘ও তাই বুঝি? এত মেয়েদের দিকে নজর কেন ছেলেটার!’
‘বাজে কথা বলবি না বলে দিচ্ছি।’ ‘না না বাজে কিছু বলছি না।’
‘শুধুই….
“আচ্ছা যাই হোক কালকে কলেজ এ কী খাবি বল? বিরিয়ানি?’
‘কেন? তুই বানিয়ে দিবি?’
“জি শিখেছি বিরিয়ানি বানানো।’
‘আচ্ছা যা তাইলে কালকে তোর হাতের বিরিয়ানি কালকে খাবো হাহা।
পরের দিন কলেজে
কলেজের সব ছেলে মেয়ের আকর্ষণ আবিরের প্রতি। কোথায় সেই তিন মাস আগের আবির? আগের আবির থেকে এ তো কমপ্লিটলি চেঞ্জড! সকল মেয়েদের আকর্ষিত করছে যারা তাকে একবিন্দু পাত্তাও দেয়নি তারা আজ আবির এর সাথে ছবি তুলছে।
বাহ্ নাজিহার হাতের বিরিয়ানি তো অনেক ভালো হয়েছে। হেহে, আমি ওকে
এসব বলছি না। দুপুরের দিকে আবির বাসায় ফিরলো
‘কীরে বিরিয়ানি কেমন হলো??
‘খুবই ফালতু, বাজে।’
‘কী!’
‘এরচেয়ে বাজে বিরিয়ানি জীবনেও খাইনি।’
‘ঠিকাছে যা জীবনেও কিছু পাবি না।’
পরবর্তী দুই দিন আবির এর সাথে নাজিহার কোনো কথা হয়নি। আবিরকে পরবর্তী দিন থেকে স্কুল এর সারাহর সাথে রেগুলার দেখা যায়। নাজিহা একদিন
কলেজ থেকে আসতে আসতে দেখলো আবির সারাহকে নিয়ে ফুচকা খাচ্ছে। ঘরে ফিরে আসার পর নাজিহা আবিরকে জিজ্ঞাসা করলো “কীরে? সারাহর সাথে তো দেখি খুব খাতির।
আরেহ ও তো সেই! সেই। ওর হাতের বিরিয়ানি উমমম!! সেই সেই।’ ‘মানে?’
“আরেহ ও আমাকে বিরিয়ানি রেঁধে খাওয়ায় ডেইলি ‘ও আচ্ছা ঠিকাছে থাক। আমি না হয় যাই।’
নাজিহার মনে হতে লাগলো, মানুষটাকে বদলালাম আমি চেঞ্জ করলাম আমি শেষে কি-না সারাহ! না এতো হতে পারে না।
ঐদিন বিকালেই নাজিহা জানতে পারলো তার বাবার ট্রান্সফার হয়েছে। তারা শীঘ্রই চিটাগাং চলে যাচ্ছে। “যাই না হয় চিটাগং, আবিরকে বদলাতে পেরেছি এতেই আমার শান্তি।”
যাই হোক আবির ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক এইটাই আমার কামনা। ও থাকুক সারাহকে নিয়ে। যাই হোক খবর তা অন্তত বলে আসি। ‘আবির?’
“আচ্ছা পরে ফোন দিচ্ছি আচ্ছা নাজিহা এসেছে।” “জি বল কী বলবি? তাড়াতাড়ি বল টাইম নাই ।
‘আমি কালকে সকালে চলে যাচ্ছি বাবার ট্রান্সফার হয়েছে কালকে চট্টগ্রাম চলে যাবো তোর সাথে এই বোধয় শেষ কথা। কথাটি বলে নাজিহা পিছনের দিকে হেটে চলে গেলো শাড়ির আঁচলের ছোঁয়া
দিয়ে গেলো আবিরকে। কথাটা শুনে আবির দশ মিনিট থমকে ছিল। নাজিহা চলে যাবে? কাকে নিয়ে থাকবে সে? নাজিহাকে ও তো এতোক্ষণ বিরক্ত করছিলো, জ্বালাচ্ছিলো। ও চলে গেলে কার সাথে মজা নিবে কার সাথে মজা করবে? আবির আবার ব্লেড হাতে নিলো।
‘এই? কী করছিস আবার?’
তাতে তোর কী? তুই যা চিটাগাং ।
‘আমি গেলে তোর কী?’
‘আমার কী?’
‘কী?’ ‘কিচ্ছু না।’
‘আমি হাত কাটলে তোর কী?’
‘আমার কী আবার? কিচ্ছু না।’
‘আচ্ছা যা।’ ‘যাই ভালো থাকিস আশা করি দুনিয়ায় কোথাও দেখা হবে।
আবির এক পলকে নাজিহার দিকে তাকিয়ে থাকলো… ভ্যান সব লাগেজ নিয়ে
পরেরদিন সকালে নাজিহা চলে যাচ্ছে তাদের পিকআপ গেছে। আবির যেন নাজিহাকে জানালা দিয়ে দেখছে।
‘নাজিহা একটু আসবি? একটিবার?’
নাজিহা উপরে এলো…
‘নাজিহা আমি তোকে ভালোবাসি, আই লাভ ইউ।’ নাজিহা কথা শুনে থমকে গেলো। “বল? তুই কি বাসিস না?’
এবারও কোনো উত্তর নেই। ‘নাজিহা?’
‘তুই না সারাহকে পছন্দ করিস?’
“আরেহ ধুর সব আমি করসি তোরে জ্বালানোর জন্যে। তোর হাতের বিরিয়ানি আসলে সেই ছিল। ওদিন ইচ্ছা করে সারাহকে নিয়ে আমি ফুচকা খেতে গেসিলাম তোকে দেখানোর জন্যে সারাহ আমার কাজিন আমার চাচাতো বোন।
‘তাই বল।’ নাজিহার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো ‘বল? তুই কি আমাকে চাস? তুই সত্যি আমাকে ভালোবাসিস?’
‘অনেক।’
‘আমি তোকে কী শিখিয়েছি?’ ‘অনেক কিছু শিখিয়েছিস।’
‘কী শিখিয়েছি বল।’
আবির কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো
‘কোনোকিছুই অসম্ভব না।’
‘এখন আমরা মাত্র কলেজে। তোকে বুয়েটে পড়তে হবে আবির, সাথে
আমাকেও।
‘আমি আর বুয়েট? অসম্ভব
‘কেন অসম্ভব?’
‘দেখ তুই মেধাবী আমি তো ফেন্টুস। আমি কি পারবো?’
“আমি তোকে কী শিখিয়েছি? তোর ক্যাপাবিলিটি আছে আবির। তুই পারবি। যদি আমাকে মন থেকে চাস আজ ৩১ ডিসেম্বর দুই বছর পর ঠিক এই দিনে বুয়েট এর ক্যাম্পাস এ আমরা মিট করবো। ঠিকাছে? ‘ঠিক আছে নাজিহা।’
এরপর আলতো করে নাজিহা আবির এর কপালে একটা চুমু খেলো। এরপর বিদায় নিলো। নাজিহার গাড়ি ছেড়ে দেয়ার পর থেকে আবির এর আর ভালো লাগে না। কিন্তু না আবিরকে পড়তে হবে। আবিরকে পড়তে হবেই…
এখন আবির আর আগের আবির নেই। কলেজ এর ফার্স্ট বয়। ফিজিক্স ম্যাথ এ পারদর্শী। মেয়েরা তার থেকে পাত্তাই পায় না। ডেইলি উঠে জিম করে। পুশ আপ দিয়ে থাকে। দেখতে ফিটফাট। পড়াশোনায় সমান পারদর্শী। একদিন হঠাৎ আবির দেখতে পেলো
তার বিছানার নিচে একটা চিরকুট “কী খবর মিস্টার? ভাবছিলাম সামনে এসে দিয়ে যাই। একটা চিরকুট লিখে
যাই।’
আরেহ এটা তো নাজিহার লিখা। তার মানে নাজিহা আজ এখানে এসেছিলো।
আরেহ সেন্ট এর গন্ধ! পিছনে আবির লিখা দেখতে পেলো
খবর নিয়েছি, ইউ আর অন রাইট ট্র্যাক মাই বয়। আমাকে পেতে চাইলে চালিয়ে
যা। তোকে চালিয়ে যেতেই হবে…।
আমি পারবো। আমি পারবো বুয়েটে চান্স পেতে। নাজিহাকে পেয়ে দেখাবোই আমি পারবোই। আই উইল মেক ইট। আইই উইল মেক ইট….। আমি পড়বো আমি ঠিকঠাক কাজ করবো।
দুই বছর পর….
বুয়েটের রেজাল্ট দিয়েছে। আবির শেষ থেকে দেখা শুরু করলো। না শেষ থেকে তার নাম নেই। কী মনে করে আবির যেন প্রথম নামটা লক্ষ্য করলো- আরেহ? আবিরের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো….
আমি ফার্স্ট। আমি বুয়েটে ফার্স্ট। আমি পেরেছি, এই হ্যাভ ডান ইট। সেকেন্ড নামটি আবিরের পরিচিত লাগলো। নাজীহা! আরেহ নাজিহা সেকেন্ড? আরেহ!
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর….৩১ ডিসেম্বর….আমি অপেক্ষা করব। ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হবে। আল্লাহ যা চান তাই হবে।
দশদিনের মাথায় আবির হঠাৎ একটি বিব্রতকর পোস্ট দেখলো। নাজিহা। দশজন ছেলে মিলে নাজিহর জামা টানাটানি করছে টেনেহিচড়ে নাজিহাকে নগ্ন করে তুলেছে। ছিহঃ.ছিঃ.. এসব কাজের মাঝে আবির যেন ফিরে পেলো এক পরিচিত। মুখ।
বাবা! সামনের লোকটি যেন তার বাবা?
নাজিহার কাছে যেতে মন চেয়েছিল আবিরের। আবির ওদিন রাতের বাসেই চিটাগাং এ চলে গেলো। পরেরদিন সকালে আবির চিটাগাং পৌছালো। নাজিহার বাবা প্রভাবশালী ইঞ্জিয়ার ছিল। যার কারণে তার বাসা খুঁজে পেতে আবির এর সমস্যা হয়নি। ঘরে ঢুকে দেখলো
‘আমার মা মা গো…কী দোষ ছিল তোর? মা? মা গো?’ আবির দেখলো নাজিহার মা বিলাপ বকছে। আবির আস্তে করে তাঁর কাছে গিয়ে বসলো।
‘আন্টি আমাকে চিনেছেন?’
‘কে তুমি?’
‘আন্টি একটু খেয়াল করে দেখুন চিনেন কি-না?’
‘তুমি কি আবির?’ “জি আন্টি আমি আবির।’
‘বাবা, নাজিহাকে প্রভাবশালী পলিটিকাল এমপিরা ধরে নিয়ে গেছে। আমার
মেয়েটাকে নিয়ে তারা আজেবাজে কাজ করছে। আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে
বাবা? সে এখন ধর্ষিতা একজন মেয়ে।’
‘আন্টি দোষ তার নয়।’
‘কত্তবার বলেছি ওয়েস্টার্ন পরতে না ওয়েস্টার্ন পরতে না। হলো তো।’ ‘তুমি এসব বিলাপ বাদ দাও। সেই ছেলে কীভাবে ভাবে মাস্তান এর সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো? আরেহ আবির না-কি?’
‘আংকেল আমাকে বলুন নাজিহা কোথায় আছে। করা ধরে নিয়েছে।’
‘করা ধরে নিয়েছে আমরা কিছু বুঝছি না বাবা। কিন্তু আমি জানি এলাকার
মাস্তান রাকিব ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছে।
‘কোথায় সেই রাকিব?’
‘বাবা বাইরেই আছে। খুঁজে পাবে।’
কথা দিচ্ছি আংকেল। নাজীহাকে আমি খুঁজে আনবোই আনবো। কথা
দিলাম।
এই ভেবে আবির রাকিব এর খোজে বের হলো। রাস্তার একদম মোড়ের মাথায় বিড়ি টানছিলো রাকিব।
‘রাকিব?’ “জি ভাই?’
“তোমাকে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করবো জাস্ট উত্তর দিবে। আমি কোনো
ঝামেলা চাই না।’
‘আমার কথা আপনাকে কেন বলবো? ‘তুমি নাজিহাকে অপহরণ করেছো?’
‘ভাই এগুলো আমি আপনাকে কেন বলবো? আপনি কি পুলিশের লোক?’ ‘বলো তুমি কি করেছো?’
“না ভাই।’
আবির রাকিবের কলার চেপে ধরলো।
“সত্যি বলো তুমি কী জানো?’
‘ভাই আমি কিচ্ছু জানি না।’
আবির এক ঘুষি লাগলো রাকিবের নাকে। ‘বলবি কি-না বল!’
“আরেহ ভাই আমি কিছুই জানি না কী বলবো?’ ‘বলবি? না-কি তোর গোপনাঙ্গে লাখি দিবো? বিয়ে শাদি তো করিস নাই
সো সমস্যা নাই তাই না?’
‘ভাই? বুঝতেসেন আপ্নে কী করতেসেন?’ ‘বল শালা বলবি? না-কি।’
আবির পকেট থেকে ছুরি বের করলো।
‘এটা দিয়ে কেটে দিবো।
‘বলছি ভাই বলছি।’
‘বল শালা।’
‘আমার নাজিহার প্রতি কোনো আকর্ষণ কোনো দিন ছিলো না।’
‘তাহলে?’
‘আমাকে কমান্ড দেয়া হয়েছে। আমার বাবা মা নেই। আমি একা থাকি। আমি একা চলাফেরা করি। ছোটবেলায় খাইতে পারতাম না কিছু। হঠাৎ একদল সন্ত্রাসী আমাকে প্রাণে মারার চেষ্টা করে। তাদের থেকে প্রাণ ভিক্ষা চাই। দলের
লিভার আমাকে প্রাণ ভিক্কা দেন এই শর্তে যে ওনার কাজে আমাকে সারাজীবন পড়ে থাকতে হবে।
এখানে নাজিহার কী সম্পর্ক।
“তিনি প্রতিদিন কোনো না কোনো মেয়েকে টার্গেট করে থাকেন। তাদের বিনা দোষে হত্যা করেন। হত্যা করে তার বাগান এ কবর দিয়ে সেন ? ‘এত নিকৃষ্ট? এত নিকৃষ্ট মানুষ বেঁচে আছে কী করে??
তিনি এই নিয়ে ৫০০ জন নারী কে হত্যা করেছেন।” ‘নাজিহার কিছু হয়নি তো?
নাজিহাকে আজকে পুড়িয়ে মারবেন। কারণ ধর্ষণের সময় বস এর গালে থাপ্পড় বসিয়েছিলো।’
“আল্লাহ না করুক কিচ্ছু হবে না।? ‘আর ২ ঘণ্টা পর নাজিহাকে ঝোলানো হবে।
‘২ ঘণ্টা? ২ ঘণ্টায় আমি কিভাবে যাবো? তোমাদের ডেরা কোথায়?
“আমাদের ডেরা কক্সসবাজার এর মহেশখালীতে।
এখন থেকে মহেশখালী যেতে কতক্ষণ লাগবে??
‘আনুমানিক ৮ ঘণ্টা…।’
৮ ঘণ্টার পথ ২ ঘণ্টায় সম্ভব?’
‘না স্যার অসম্ভব।’
‘পৃথিবীটা এক আজিব নক্ষত্র। কেউ বলে সম্ভব কেউ বলে অসম্ভব কিন্তু নাজিহা আমাকে শিখিয়েছে- সব ই সম্ভব।
আমি পারবো, আমি নাজিহাকে বাঁচাবো। যেই মেয়ে আমাকে উদ্ধার করেছে আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে আমাকে বদলাতে সাহায্য করেছে। আমি তাকে
বাঁচাবো। আমি তাকে রক্ষা করবো।
ঠিকাছে রাকিব, আমাকে ডেরার ঠিকানা দাও বাকিটা দেখছি।’
‘মহেশখালী গিয়ে আপনি পাবেন না।’
‘তাহলে?’
‘আপনাকে কুতুবদিয়া আইল্যান্ড দিয়ে পার হতে হবে যাওয়ার পথে অনেক কালো পোশাক পরা বাহিনী পাবেন তাদের দাঁড়ানোর লাইন অনুসরণ করে আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন।’
“ঠিকাছে।’
দৌড় শুরু করলো আবির। অসম্ভবকে সম্ভব করতেই হবে। নাজিহার কথাগুলো মনে করতে করতে দৌড়াতে থাকলো। সকালে নাজিহার বকাঝকা, বিকেলে
নাজিহার সাথে ছবি তোলা, খুনসুটি, বিরক্ত, ওর পাগলামি। নাজিহা আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে। আই উইল ডু ইট ইনশাআল্লাহ এই উইল মেক ইট পসিবল। নাজিহার কথা মনে করতে করতে আবির ৬০ মিনিটেই কক্সবাজার লৌছে গেলো। নৌকা না পেয়ে সাঁতার কেটে বড়ো মহেশখালী পৌঁছালো। এনার্জি পাবার জন্যে আবির একটা ডাব কিনে খেলো। বাকি আর ৪৫ মিনিট। আবার সে পানিতে ঝাঁপ দিলো ১৫ মিনিট এ কুতুবদিয়া আইল্যান্ড এ পৌঁছালো। আইল্যান্ড এর মালিকই সেই নরপিশাচ পশু।
সে দূর থেকে কালো পোশাক পরা দস্যুদের দেখতে পেলো।
আবির আরো জোরে সাঁতরাতে লাগলো। ধীরে ধীরে তার কেন যেন জায়গাটা চেনা জানা লাগছিলো। আরেহ এখানে তো আমার মাকে হত্যা করেছিল। আমি তো, এইতো এখানে তো আমি রোজ খেলতে আসতাম। জায়গাটা তো আমার বাবার ছিল। হঠাৎ তার দিকে একজন তেড়ে এলো। আবিরকে এক কিল মেরে আঘাত করলো। আবির তাতে দমে গেলো না। আবির ঘাবড়ালো না। দস্যুকে পানিতে চুবিয়ে মারলো। সে দ্বীপে উঠে এলো। দুইজন একইসাথে আবিরের দিকে তেড়ে এলো। আবির পিছে ঘুরে দুইজনকে দুইদিক থেকে লাখি মারলো। কিন্তু না, আবির যেন শৈশব এ ফিরে গেলো। অন্যমনস্ক হয়ে পড়লো সে। হঠাৎ একজন তলোয়ার নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে আসলো। হঠাৎ একটি মেয়ে কণ্ঠস্বর বলে উঠলো- থামুন। আবির যেন একটি চেনা কণ্ঠ শুনতে পেলো।
‘থামুন এটি আমার ছেলে আবির।’
আবির পিছে ঘুরে দেখলো তার মা দাঁড়িয়ে আছে।
‘মা তুমি?’
‘বাবা তুই এতদিনে আসলি? চিনেছিস?’ ‘বাবা কিছুই করেনি। সব নরপিশাচ ড্যানিয়েল এর কারণে।’
‘বাবা আমি বেঁচে আছি, মরিনি।’
‘বাবা তোমাকে কী করেছে?’
‘ড্যানিয়েল?’
‘হ্যাঁ বাবা, ড্যানিয়েল তোর বাবার থেকে এই দ্বীপ কেড়ে নিতে চেয়েছিলো। তোর বাবা তখন দিতে চায়নি। তখন তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছে। আমি তোকে আমার দাসীর হাত দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে মারতে চেয়েছিলো তবে বুড়ি ছদ্দবেশ ধারণ করে আমি আজ অব্দি বেঁচে আছি। আমাকে মারতে পারেনি। আর ড্যানিয়েল তোর বড়ো চাচা। তোর বাবাকে বন্দি করে রেখেছে। তোর বাবাকে সব ধরনের কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।
আবির অশ্রুঝরা কান্নায় তার মাকে জড়িয়ে ধরলো।
‘যা বাবা যা নাজিহার মতো নিষ্পাপ একটা প্রাণ রক্ষা কর। আমি সব জানি। বাড়িওয়ালা আমার দাসী ছিল প্রতিদিন আমি তোর খবর নিয়েছি ।। আবির আবার দৌড়াতে শুরু করলো। হাতে আছে ২০ মিনিট। মাত্র ২০ মিনিট। আবির কি পারবে?
৫মিনিটে আবির তার চাচার ডেরায় পৌঁছে গেলো। হঠাৎ চারপাশ অন্ধকার। আবির…এসেছো বাবা…তুমি এসেছো…. আবির..আমাকে বাঁচাও…ওরা আমাকে মেরে ফেলবে…
আবির আর পারবি না সামাল দিতে। তুই মরবি।
আবির। বাবা, তুই আমাদের সম্পদ আমাদের বাঁচাতে আবির, হাত কাট। হাত কেটে ফেলে।
পারবি তো !
আবির, সুইসাইড ইজ অল সল্যুশন ডু ইট আবির ডু ইট। নো ইট’স নোট। সুইসাইড ইজ নোট এ সল্যুশন। নাজিহা আবিরকে শিক্ষা দিয়েছে— সুইসাইড ইজ নট এ সল্যুশন।
আবির চিল্লিয়ে বললো
না না না। সুইসাইড কোনো সল্যুশন নাআআআআ।
হঠাৎ চারপাশ নরমাল হয়ে উঠলো। আবির বুঝতে পারলো, অচেনা মানুষের জন্য তার চাচা মাইন্ড গেম সেট করে রেখছে। এতে মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে তার ডেরায় আর প্রবেশ করে না। কিন্তু আবির পেরেছে, আবির মাইন্ড গেম জয় করে ফিরতে পেরেছে। আবির হ্যাভ ডান ইট।
৫ মিনিট আর মাত্র পাঁচ মিনিট। জানালা ভেঙে আবির ডেরায় প্রবেশ করলো।
নাজিহাকে দেখতে পেলো। ব্লাউজ আর শর্টস পরিয়ে তাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ড্যানিয়েল ধীরে ধীরে নাজিহার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবির দৌড়ে গিয়ে নাজিহার সামনে দাঁড়ালো। পারবি না তুই পারবি না। তুমি কে?
আবির বাবা তুমি?
আবির পিছনে তার অসহায় বাবাকে দেখতে পেলো।
‘ও ভাতিজা, তোমায় আমি প্রাণে ছেড়ে দিয়েছি। তার উপহার স্বরূপ এই মেয়েটিকে খেতে দাও। ভাতিজা সরে যাও কিন্তু না আবির সরে গেলো না। দৌড়ে গিয়ে তার চাচার মাথায় একটি ঘুষি মারলো। চাচা দূরে পড়ে গেলো। আবির নাজিহার দিকে চলে গেলো। হঠাৎ তার মাথায় বাবা আবির নাজিহা কেউ না কেউ না। ওকে তুমি কেন বাঁচাবে? এস আমরা তোমাকে আরো সুন্দর মেয়ে দিচ্ছি। বাবা, দেখো তোমার মা। এইতো তোমার মা। আবিরের মাথা কাজ করছিলো না। সে নাজেহাল হয়ে পড়লো। কী করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছিলো না। সে চিল্লিয়ে বলে উঠলো- নাজিহা এই লাভ ইউউউ অনলি ইউউউ। হঠাৎ সব নরমাল হয়ে গেলো। সে নাজিহার দিকে আবার দৌড়ে গেলো। হঠাৎ কে যেন তার মাথায় আঘাত করলো। আবিরের গলা পেঁচিয়ে ধরলো। তার বাবাকে তার চাচা বলতে লাগলো- গুলি করো গুলি করো।
আবিরও ভাবছিলো, জীবনে কারো মমতা পাইনি। সব ফিরে পেয়েও মনে হয় হারাতে হচ্ছে সামনে আজ মা বাবা নাজিহা। সবাইকে ছেড়ে মনে হয় আজ পৃথিবী ছাড়তে হবে। আবির ভাবলো এই বুঝি তার শেষ কিন্তু না তার বুকে কোনো গুলি লাগেনি। ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো তার চাচা। তার চাচার পায়ে গুলি করা হয়েছে।
হ্যাঁ তার বাবা এটি তার বাবা। মাইন্ড গেম থেকে মুক্তি পেয়েছে। তার বাবা না, পুরো দ্বীপের মানুষ মাইন্ড গেম থেকে মুক্তি পেয়েছে। আবির দৌড়ে গিয়ে ড্যানিয়েল এর বুকে লাথি দিলো। হাতুড়ি নিয়ে এসে ড্যানিয়েল এর বুকে মারলো। চুরি দিয়ে চোখ দুটি উপরে নিলো। পুরো দ্বীপের মানুষ বাহবা দিতে লাগলো। শেষে আবির নাজিহাকে কোলে করে নিচে নামিয়ে অন্য। সেই জায়গায় ড্যানিয়েলকে ঝোলানো হলো।
‘তোকে আমি ছাড়বো না।’ আবির বলে উঠলো। ‘তুই আমাদের বংশের দজ্জাল।’ এই বলে। আবির ড্যানিয়েল এর পা জ্বালিয়ে দিলো। সকলে প্রত্তক্ষণ করলো ড্যানিয়েল এর আগুন এ পড়া দৃশ্য। সবাই যেন এক সুখানুভূতি ফিল
করছে। আবির নাজিহার দিকে দৌড়ে এলো। নাজিহাকে জড়িয়ে ধরলো। তার বাবাকে আলিঙ্গন করলো। বাবা ও নাজিহাকে নিয়ে আবির ডেরা থেকে বেরিয়ে এলো। এসে দেখলো তার মা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আমি জানতাম বাবা তুই আসবি। তুই পারবি, আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে শুকুর আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ ২১ বছরের প্রতীক্ষা আজ শেষ হলো।’ আবির তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। নাজিহার চোখ দিয়েও এই দৃশ্য দেখে পানি পড়তে লাগলো।
পরবর্তীতে সব মৃত নারীদের লাশ পরিবার এর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আবিরকে জাতীয় সাহসী বীর হিসেবে প্রধানমন্ত্রী খেতাব দেন। যেই আবির কারো কাছে পাত্তা পেতো না সে আজ লাখ মানুষের ইনস্পিরেশন। পুরো বিশ্বে যেন এক পরিচিত মুখ।
৩১ ডিসেম্বর….
নাজিহা একটা লাল গাউন পরেছে। আবির কালো সাদা স্যুট। ‘প্রমিজ রাখতে পারলাম?’
তারা যেন বুয়েট এর ক্যাম্পাস এ মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছে মাঝে আছে টেবিল।
‘হাতটা দাও একটু ধরি। একটা জিনিস জানো??
‘কী?’
‘আজ আমাদের পরিচিত হবার ১০০০০ দিন। ঠিক দশ হাজার দিন আগে
আমরা পরিচিত হয়েছিলাম।’ “ও তাই তো। আমি তো তোদের বাসায়। এতো মনে আছে?’
“জি আছে। তোর ডায়েরিটা ফেলে গিয়েছিলি।’ “ইশ পাজি এতদিন এ ডায়েরিটা পেলাম।’
‘চোখটা বন্ধ কর।’ ‘এবার খুলবো?’
‘খুলো।’
নাজিহা দেখলো, আবির হাটু গেড়ে বসে আছে। হাতে একটা হীরার আংটি।
‘নাজিহা উইল ইউ ম্যারি মি?’
‘উত্তর দিতে পারবো না সরি।’
‘হাতটা দিবেন?’
‘নিন।’
আবির সুন্দর করে আংটি পরিয়ে দিলো। আজকে থেকে আপনি আমার আমি আপনার।
আবির নাজিহাকে কাছে টেনে আনলো। তাদের চুম্বনে যেন মুখরিত হয়ে উঠলো তখনকার বাতাস।
এবার ফানুস উড়াবো। ফানুস এ এতদিন যা কষ্ট ছিল সব লাঘব হবে ৩২১ গো। হঠাৎ নাজিহা আতশবাজি দেখতে পেলো। চারিদিকে ফানুস আর ফানুস। আকাশে আজ ৮৯২ ফানুস। কারণ ঠিক ৮৯২ দিন আগে আমি আপনাকে কথা দিয়েছিলাম বুয়েট এর মাঝে দেখা করার।
‘আবির?’
‘নাজিহা।’
হঠাৎ ১২ টা বাজলো। আতশবাজিতে মুখরিত হয়ে উঠলো আকাশ। এই আতশবাজি ফানুস ভরা রাতে কালো খোলা আকাশের নিচে আবির আর নাজিহা একে অপরকে চুম্বন করতে লাগলো। তাদের ভালোবাসার বন্ধন যেন অটুট। সারাজীবন এর জন্যে।
তো আজকে আমার পোষ্ট এই পর্যন্তই । মানুষ মাত্রই ভুল হয় । তাই ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়েন । অনেক কষ্ট করে পোস্টটি তৈরি করেছি। আশা করি পোস্টটি সবার ভালো লেগেছে । কোনো কিছু না বুঝতে পারলে কমেন্টে জানান । আর আপনারা কমেন্ট করলে আমিও নতুন নতুন পোস্ট লেখার উৎসাহ পাই । আপনি চাইলে এই লিংক এ ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে join করতে পারেন । আর যেকোনো প্রয়োজনে ফেসবুকে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন ।
The post নিয়ে নিন একটি চমৎকার modern story appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/wEgt1vA
via IFTTT
No comments:
Post a Comment