• এসএসসি রেজাল্ট ২০১৯ । নাম্বার সহ এসএসসি, দাখিল ও ভোকেশনাল পরীক্ষার ফলাফল ২০১৯Breaking News

    Thursday, June 30, 2022

    New

    Hello what’s up guys কেমন আছেন সবাই ? আশা করি ভালো আছেন । সবাইকে স্বাগতম আজকের একটি নতুন পোস্টে । টাইটেল আর thumbnail দেখে already বুঝে গেছেন আজকের টপিক কি । আশা করি পোস্টটি শেষ পর্যন্ত দেখবেন । তো বেশি কথা না বলে আজকের পোষ্ট শুরু করা যাক
    গল্পের নাম ‌: সেই রাতে।

    “দোস্ত জানিস ঐ বাড়িটাতে নাকি অশরীরি আত্মা থাকে।”
    রাহুলের কথা শুনে জানালা দিয়ে তাকাতেই একটা বাড়ির উপর চোখ
    পড়লো।বেশ সেকেলে টাইপের একটা সাদা চুন দেওয়া বাড়ি।
    সামনের দিকটাতে মস্ত বড় বাগান,সেখানে মাথা উচিয়ে দাঁড়িয়ে
    আছে কয়েকশত আম আর কাঁঠালের গাছ সারিবেঁধে।দেখে
    মনে হচ্ছে পরিত্যক্ত একটা ভেঙ্গে পড়া বাড়ি।ভিতরের দিকে
    হওয়াতে তেমন ভাবে কারো নজর কাড়ে নি হয়তো।”
    “রেল লাইন সংলগ্ন একটা বাড়িতে নতুন ভাড়ায় উঠেছি চার বন্ধু
    মিলে।এখান থেকে কলেজটা বেশ কাছাকাছি হওয়াতে আগের
    ম্যাচ ছেড়ে দিয়ে এই নতুন বাড়িটা ভাড়া নেওয়া।আশপাশে তেমন
    কোনো হৈ হুল্লোড়-ও নেই।
    মেইন রোড ছেড়ে একটু ভিতরের দিকে হওয়াতে ভাড়াটাও
    কিছুটা কমে পেয়েছি।আর বাড়ির মালিকও এখানে খুব একটা
    আসেন না।
    তাই ব্যাচেলর হওয়াতে আমাদেরও বেশ সুবিধায় হবে।
    বাড়িটা প্রথম দেখাতেই সবাই পছন্দ করে ফেলেছি,সস্তা দামে
    এতো বড় একটা বাড়ি,কেই বা হাত ছাড়া করবে।তারউপরে তো
    আবার ব্যাচেলর,মাস শেষে কিছু টাকাও বাঁচানো যাবে।তাই সবদিক
    বিবচনা করে পরেরদিন
    বিকেলে নতুন বাড়িতে সিফ্ট হয়ে গেলাম।
    আসবাব পত্র নিয়ে এসে গাড়ি থেকে নামানোর সময় রাহুলের
    কথা শুনে হৃদয় কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,”দেখ আমি এসব
    ভূত টুতের চক্ররে পড়তে চায় না ভাই।তারথেকে এ বাড়ি থেকে
    চল চলে যাই।
    -রাহুল তুইও না,অযথা কেন ভয় দেখাচ্ছিস ওরে।জানিসই তো এই
    শহরে ব্যাচেলারদের বাড়ি ভাড়া পাওয়া কতটা ঝামেলার।
    টেবিলটা কাঁধে নিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে
    উপরে উঠে গেলো হাসান।
    আমিও হৃদয়কে অভয় দিয়ে বললাম,”শোন ভয়ের কিছু নেই
    এখানে।আর আমরাও তো থাকছি,না কি?
    রাহুল তোর সাথে মজা করছে।এখন হাতেহাতে আসবাবপত্র গুলা
    তাড়াতাড়ি উপরে তুলতে হবে সন্ধার আগে।
    তাড়াতাড়ি হাত চালা।
    সকলের জিনিসপত্র ঠিকঠাক করতে গিয়ে সন্ধ্যা তখন চারপাশটাকে
    ঘিরে নিয়েছে।আর আসবাব-পত্র তুলতে গিয়ে সবার নাজেহাল
    অবস্থা।
    এই মুহুর্তে রান্না করে খাওয়ার শক্তি বা মন কারোরই নেই।
    তাই সবাই মিলে ঠিক করলাম,পাশের খাবার হোটেল থেকে খাবার
    আনিয়ে আজকের রাতটা কাটিয়ে দেয়।গতকাল থেকে রুটিন
    করে ফেললেই হবে।
    আমি আর হাসান খাবার আনতে নিচে নেমে আসলাম।রাহুল আর হৃদয়
    জিনিসপত্র গুলো ঠিকঠাক করে গুছিয়ে নিতে লাগলো।
    সন্ধ্যা পেরিয়ে তখন রাতের আঁধার পেচিয়ে ধরেছে সরু
    গোলিটাকে।এই দিকটাতে মোটের উপর দুটি বাড়ি।একটাতে
    আমরা ভাড়া উঠেছি,আর অপরটা ভেঙ্গে পড়ার কারণে কেউ
    থাকে না।যার কারণে এই গোলিটাতে বাল্ব দেওয়ার প্রয়োজন
    মনে করে নি এলাকার মেয়র সাহেব।
    মোবাইলের টর্চটা জালিয়ে দু’জন মিলে হাঁটছি আর কথা বলছি।
    হাসান হুট করেই বলে উঠলো,”আচ্ছা আশিক,রাহুল তখন একটা বাড়ির
    কথা বলছিলো তোর মনে আছে?
    আমি সামনের দিকে অগ্রসর হতে হতে বললাম,”হ্যাঁ,কেন?
    -সত্যি কি ও বাড়িতে কোনো অশরীরি আত্মা থাকে?
    -তুই ও না,রাহুল তো তখন হৃদয়কে ভয় দেখানোর জন্য বানিয়ে
    বানিয়ে বলেছিলো।
    -তবুও,বাড়িটা দেখে আমার কেমন জানি মনে হচ্ছিলো।আর ও
    বাড়িটাতে তো কোনো লোকজন ও থাকে না।
    -পুরানো বাড়ি মানেই কি ভূতের বাড়ি হতে হবে,তোরাও না,দেখ
    রাতের বেলাতে ওসব কথা না বলায় ঠিক,তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁট।
    হাসানের প্রসঙ্গকে এড়িয়ে গিয়ে হোটেল থেকে খিচুড়ি
    কিনে আবার বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
    বাসায় ফিরে দেখি ততোক্ষণে রাহুল আর হৃদয় সবকিছু গুছিয়ে
    পরিপাটি করে ফেলেছে।
    চারজন মিলে ভাগাভাগি করে খিচুড়ি খেয়ে যে যার মত করে
    নিজের বিছানা রেডি করে ফেললাম।
    খাবার খাওয়ার পর একটু হাঁটাহাটি করাটা আমার অভ্যাসে পরিনত
    হয়েছে।না হাঁটলে কেন যানি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসে আমার।
    তাই খাবার শেষে রাহুল,হাসান আর হৃদয় সুয়ে পড়লেও আমি ঘুরে
    ঘুরে দেখতে লাগলাম বাড়িটাকে।দুটো রুম,একটা বাথরুম,আর সিড়ির
    পাশে ছোট্ট করে রান্নাঘর।অবশ্য সিড়ি ঘরের সাথে একটা ঘর
    বন্ধ হয়ে পড়ে আছে,বাড়িওয়ালা ঐ ঘরটাতে না ঢুকার জন্য কড়া
    নির্দেশ জারি করে দিয়ে গেছেন।সম্ভবত স্টোর রুম হবে
    হয়তো।
    বাড়ির আশপাশে আর কোনো বাড়ি না থাকাতে চারপাশটা কেমন যানি
    গম্ভির হয়ে আছে।
    মাঝে মাঝে মেইন রোডে চলা,গাড়ির হর্ণ আর ঝিঁঝিঁপোকার ডানা
    ঝাপটানোর শব্দে মুখরিত করে তুলছে চারপাশটাকে।
    উত্তরের দিকটাতে সারিসারি আম আর কাঁঠাল গাছ।
    তারপর আরেকটা বাড়ি।
    আজকে মনে হয় অর্ধমাসরাত্রি,যার কারণে চাঁদটাকে এক ফালি
    রুটির মত দেখাচ্ছে।
    জোৎস্নাটাও বেশ,বাইরের সবকিছুই দিনের আলোর মত
    ফকফকা।
    কিছুক্ষণ হাঁটাহাটির পর রুমে চলে আসলাম,ততোক্ষণে সবাই
    ঘুমের রাজ্যে বিভোর।আমারো যে ঘুম পাচ্ছে না একবারে তা
    নই।জিনিস-পত্র গুছাতে গিয়ে সবাই বড্ড ক্লান্ত তারউপরে আবার
    আগামীকাল সকালে কোচিং আছে।
    তাই আমিও দেরি না করে চট করে ওদের পাশের বিছানাতে
    সুয়ে পড়লাম,রুমের লাইটটা বন্ধ করে দিয়ে।
    মাঝরাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
    সদ্য বিবহিতা একজন নারী বিয়ের সাজে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে
    সিলিং এর সাথে।আর তার আলতা দিয়ে রাঙানো লাল পা দুটি আমার
    বুকের উপর শিড়শিড়ানি দিচ্ছে।
    হুট করে উঠে বসে পড়ে,সিলিং এর দিকে তাকালাম।
    তিন পাখার ফ্যানটা চক্রাকারে ঘুরছে অনবরত।তারমানে স্বপ্ন
    দেখছিলাম এতক্ষণ।গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ভয়ের
    চোটে।বিছানার পাশে থাকা পানির বোতলটা হাতে নিয়ে গলাটা
    ভিজিয়ে নিলাম।
    তারপর বুকে ফুঁক দিয়ে আবারো সুয়ে পড়লাম।কিন্তু
    কোনোভাবে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না আর।
    কেমন যানি অসস্থিবোধ লাগছে নিজের ভিতরে।
    বারবার এপাশ ওপাশ করছি,আর দুঃস্বপ্নটাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলার
    চেষ্টা করছি।কিন্তু কেন জানি মনের ভিতরে স্বপ্নটা গেঁথে
    গিয়েছে মনে হচ্ছে।
    এসবকিছুর ভিতরে হুট করে কানে ভেসে আসলো কারো
    করুন সুরে ক্রন্দনের আওয়াজ।
    ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা একটাবার দেখে নিলাম।
    ঘড়িতে তখন ঠিক দুটো বাজে,তারমানে এখন মধ্যরাতের শেষ
    ভাগ।কিন্তু এতো রাতে কে কাঁদছে?
    একটু ভালো করে কান পেতে সিউর হয়ে নিলাম।
    “হ্যাঁ।এইটা কান্নার আওয়াজ,আর একটা মেয়ের কান্নার আওয়াজ।
    বুকটা তখনি ধক্ করে উঠলো,যখন বুঝতে পারলাম,কান্নার শব্দটা
    আর কোথাও না,আমাদের ঘর থেকেই আসছে।রান্না ঘরের
    ওদিকটা থেকে।
    অথচ এই বাড়িতে আমরা চার বন্ধু ছাড়া আর কেউই নেই। তারউপরে
    আবার মেয়ে মানুষের কান্নার শব্দ!
    তাহলে কান্নার আওয়াজটা কার,আর তা-ও আবার মেয়ে মানুষের?
    মোবাইলের টর্চটা জালিয়ে দেখলাম,হাসান,হৃদয় আর রাহুল গভির
    ঘুমে ডুবে আছে। তাই নিজে নিজে উঠে রুম থেকে বার
    হলাম।
    কান্নার আওয়াজটা এখন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।আর আওয়াজটা
    আসছে স্টোর রুমের ভিতর থেকে।
    যেই রুমটাতে বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় কড়া নির্দেশ দিয়ে
    ঢুকতে বারণ করে দিছিলো।
    স্টোর রুমের বাইরে গিয়ে চুপচাপ কান পেতে দাঁড়িয়ে রইলাম।
    বাইরে থেকে রুমটার তালা বদ্ধ করে রাখা।
    বিষয়টা আমার কাছে বেশ অদ্ভুত লাগছে এই মুহুর্তে।
    বাড়িওয়ালা নিশ্চয় কোনো মেয়েকে এই রুমের ভিতরে বন্দি
    করে রেখে দিছে।আর সেই জন্য আমাদেরকে এই ঘরের
    দিকে আসতে বারণ করে দিছে।
    কিন্তু কাউকে জোরপূর্বক বন্দি করে রাখলে সে এতোক্ষণই
    বা চুপচাপ থাকবে কেন?মাথার ভিতরে হুট করে হাজারটা প্রশ্ন
    এসে হাজির হলো।
    কিছুই মাথাতে আসছে না।কিন্তু ভিতর থেকে মেয়েটা অবিরত
    কেঁদেই চলেছে।খুব করুণ সুরে কাঁদছে মেয়েটা।বুকের
    ভিতরটা নিজের অজান্তে ব্যাথিত করে তুলতে লাগলো
    ক্রন্দনের আওয়াজটা।
    নিজেকে চায়লেও আর সামলিয়ে রাখতে না পেরে টোকা
    মেরে বললাম।
    ” ভিতরে কে আছেন?
    আমার কথা শুনে কান্নার আওয়াজটা সাথে সাথে বন্ধ হয়ে
    গেলো।তারপর শুরু হলো জিনিস পত্র আচড়ে ফেলার শব্দ।
    মনে হচ্ছে এক এক করে ভিতরের আসবাবপত্র গুলো সব
    আছাড় মেরে মেরে ভাঙ্গছে।
    আবারো টোকা মেরে বললাম
    “কি হলো কোনো কথা বলছেন না কেন?আপনি চায়লে
    আপনাকে এখান থেকে মুক্তি দিতে পারি আমি।
    কিন্তু কে আপনি আর এখানে কি ভাবে এসেছেন,আর এতো
    রাতে কাঁদছেনই বা কেন?
    কি হলো কিছু বলছেন না যে?
    এমন সময় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলাম।
    -কিরে তুই এতো রাতে কার সাথে বকছিস?
    পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ঘুমঘুম চোখে হাসান দাঁড়িয়ে আছে।
    নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললাম।
    ” দেখ না,ভিতরে একটা মেয়ে সেই কখন থেকে কান্না
    করছে।আমি এসে জিজ্ঞাসা করাতে আর কিছু বলছে না।এই
    রুমের ভিতরে একটা মেয়ে আছে।
    হাসান দরজার দিকে একবার তাকিয়ে থেকে আমার দিকে
    ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো,”তোর আবার ঘুমের ভিতরে
    হাটার রোগ কবে থেকে হলো?
    -তোর কি মনে হচ্ছে,আমি তোর সাথে মজা করছি,আমি সত্যি
    বলছি এই ঘরের ভিতরে কেউ একজন আছে।আর সে এতক্ষণ
    কান্না করছিলো।আমি নিজের কানে শুনেছি।
    -কি সব ভুলভাল বলছিস,এই দেখ ঘরটার বাইরে থেকে তালা বন্ধ।
    আর এই বাড়িটাতে আমরা সেই বিকেল থেকে কথা বলাবলি
    করছি,তাহলে তোর কি মনে হয়,এতক্ষণ এই রুমে কেউ বন্দি
    হয়ে থাকলে চুপচাপ থাকতো।
    বলেই তালা ধরে টান দিতে দিতে আবারো বললো,”ঘুমের
    ভিতর কি না কি দেখে আবোল তাবোল বকছিস।চল ঘুমাতে চল।
    -বিশ্বাস কর দোস্ত,আমি নিজের কানে শুনেছি।
    -আচ্ছা ঠিকাছে,এখন তো আর কান্না করছে না।নিশ্চয় কান্না
    করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে।চল তুইও ঘুমাতে চল।সকালে
    আবার কোচিং আছে।কালকে দিনের বেলাতে বিষয়টা নিয়ে ভাবা
    যাবে।
    স্টোর রুমের চাবিটাও নেই,যে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে
    সবাইকে সত্যিটা দেখাবো।প্রমান যেহেতু নেই,সুতরাং চুপচাপ
    থেকে যাওয়াটাকে এই মুহুর্তে প্রাধান্য দিয়ে হাসানের সাথে
    রুমে চলে আসলাম।
    হাসান আমাকে সুতে বলে নিজে আবার সুয়ে পড়লো।আমি মাথার
    নিচে বালিশ চেপে ধরে ভা্বছি,আসলে কি ঐ ঘরের ভিতরে
    কোনো মেয়ে আছে? আমি নিশ্চিত ঐ রুমে কোনো
    মেয়েকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।কোনোরকমে রাতটা
    পার করি,তারপর কালকে সুযোগ বুঝে তালা ভেঙ্গে ব্যাপারটা
    খতিয়ে দেখলেই হবে।

    ,,,
    “সারারাত কাটলো ভয় আর দুশ্চিন্তার ভিতর দিয়ে।রাতে আর
    কোনরকমে দু চোখের পাতা এক করতে পারলাম না।খুব
    ভোরে উঠে পড়লাম আবার।সিড়ি ঘরের চাবিটা রুমের বাইরে
    পেরেকে বাধাঁনো,তাই কাউকে ডাকার প্রয়োজন পড়লো না।
    ওরা তিনজনে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে,কিন্তু আমার মনের
    ভিতরে কিসের যেন একটা জড়তা কাজ করছে,ছাদে গিয়ে যদি
    মনটা একটু হাল্কা হয়।
    চাবিটা হাতে নিয়ে আরো একবার স্টোর রুমের দরজার সামনে
    গিয়ে কান পেতে চুপচাপ দাঁড়ালাম।
    ” নাহ্ ভিতরটা একবারে নিস্তব্দ।তাহলে কি গতকালকের কান্নার
    আওয়াজটা আমার ভ্রম ছিলো?
    সে যাই হোক,চাবিটা হাতে করে সিড়ি ঘরের দিকে যেতে
    গিয়ে থমকে দাড়ালাম আবার,একটা পুতুল দেখে!একটা মেয়ে
    পুতুল,খুব সুন্দর করে সাজানো,ঠিক গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখা
    বধূ সাজের সেই মেয়েটার মত করে সাজানো আছে।
    পুতুলটা ঠিক বেসিনের উপর দাড় করানো অবস্থাতে আছে।ভারি
    অদ্ভুত তো,এ বাড়িতে তো আমরা চারজন ছাড়া আর কেউই
    নেই,তাহলে বাচ্চাদের পুতুল আবার কে নিয়ে রাখলো?
    গতকালকের হাবিজাবি মনে করে করে মাথাটা এমনিতেই প্রচন্ড
    ধরে আছে,তারউপরে আবার পুতুলের এসব ঝামেলা নিতে চায়
    না।
    বিষয়টাকে তোয়াক্কা না করে ছাদে উঠে গেলাম।
    বেশ মনোমুগ্ধকর একটা সকাল।শীতের আভাস ছড়িয়ে
    পড়েছে চারপাশটাতে।
    ছাদের কার্ণিশ জুড়ে মেখে আছে কুয়াশার বিন্দু বিন্দু জল।
    কুয়াশাতে হাত দিতেই শরিরের ভিতরে কেমন জানি শিতল অনুভূতি
    ছেয়ে গেলো।সামান্য একটু কাপা কাপা অনুভব হলো নিজের
    ভিতরে।
    বুক ভরে শ্বাস নিয়ে চারপাশটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম।
    কুয়াশাতে চারপাশটাকে মুড়িয়ে ধরেছে,সবকিছু কেমন যানো
    ভাপসা দেখাচ্ছে।
    আম-কাঁঠালের সারি এড়িয়ে হঠাৎ করে চোখ পড়লো অদুরে
    অবস্থানরত সাদা চুনের বাড়িটার উপরে।
    গতকাল রাতের ঘটনাটা কোনোভাবেই মন থেকে সরতে
    চায়ছে না।একটাবার দেখার দরকার স্টোর রুমের ভিতরটা,তাহলেই
    সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।
    নিচে বেশ সোরগোল জমেছে,তারমানে সবাই হয়তো
    উঠে গেছে। রাহুল বেশ কয়েকবার আমার নাম ধরে ডাক ও
    দিছে।
    আর দেরি না করে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসতেই
    দেখি,সবাই বাথরুমে যাওয়ার জন্য ঝগড়া শুরু করে দিছে।
    আমাকে দেখে হৃদয় বলে উঠলো,”তুই এখানে!
    -হ্যা।কেন?
    -তুই বাইরে থাকলে বাথরুমের ভিতরে কে আছে তাহলে?
    রাহুল,হৃদয় আর হাসান তিনজনে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে
    দেখছে আমাকে।
    আমি কিছুটা থতমত খেয়ে জবাব দিলাম।
    -আমি কি করে বলবো,আমি তো ঘুম থেকে উঠে ছাদে
    গেছিলাম।ভালো করে দেখ,হয়তো জ্যাম হয়ে গেছে।
    হাসান বেশ কয়েকবার টান দিয়ে বললো।
    -নারে,ভিতর থেকে লক করা মনে হচ্ছে।
    জানি সবার ভিতরে একই প্রশ্ন ঘুরছে এখন।
    “চারজনে বাইরে থাকলে বাথরুমের ভিতরে কে থাকতে পারে?
    -গতকাল রাতে সবার শেষে বাথরুমে কে ঢুকেছিলো?(হাসান)
    হৃদয় চোখ ডলতে ডলতে জবাব দিলো,” আমি।”
    -তাহলে এখন আবার লক দেখাচ্ছে কেন?
    নিশ্চয় ব্যাটা মরকট কিছু একটা করে এসেছে ভিতরে গিয়ে।(রাহুল)
    -রাহুল তুই সবসময় আমাকে কেন দোষ দিস,তোরা কি সারারাতের
    ভিতরে একবারো আর যাস নি?
    আর আমিই বা কেন ভিতর কিছু করতে যাবো।
    করে থাকলে তো আর তোদের সাথে এখানে পেট
    চেপে ধরে দাড়িয়ে থাকতাম না।
    হৃদয়ের কথাটাও ফেলার মত নয়।একটু বেলা গড়ালে মিস্ত্রী
    ডেকে এনে ঠিক করে নিলেই হবে।হয়তো জ্যাম হয়ে
    গেছে দরজার লকড্ টা।
    সকালে সবাই মিলে রেললাইনের পাবলিক টয়লেট থেকে কাজ
    সেরে কোচিং করতে গেলাম।।স্যার একাউন্টিং করাচ্ছে,কিন্তু
    আমার মাথাতে কেন জানি ঐ বাড়িতে ঘটা কিছু ঘটনা খেলে
    বেড়াচ্ছে। যতই ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছি
    ততোই মগজধোলায় করছে ওগুলো।
    স্যারের হ্যা তে হ্যা দিয়ে কোনোরকমে কোচিংটা শেষ
    করে আবারো বাসায় চলে আসলাম।
    অবশ্য হাসান আর হৃদয় মিস্ত্রী ডাকতে গেছে,আমার আর
    রাহুলের রান্নার দিন আজকে।তাই ওদেরকে পাঠিয়ে দিয়ে আমার
    দুজনে এসে রান্না চাপিয়েছি।
    মিনিট ত্রিশেক পর হাসান আর হৃদয় তাদের সাথে একটা লোক
    নিয়ে এসে হাজির হলো।
    লিকলিকে দেহের গড়ন,চুলগুলাও কেমন জানি
    উসকোখুসকো,মুখভর্তি দাড়ি-গোফ রেখে দেওয়াতে
    অনকটা “শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’ এর দেবদাসের মত লাগছে।
    লোকটার ডান বাহুতে একটা ব্যাগ।
    আমাকে দেখে হাসান বললো,” মিস্ত্রী নিয়ে এসেছি।তালা
    সারানোর মাষ্টার ইনি।
    তালার কথা শুনতেই হুট করে স্টোর রুমের কথা মনে পড়ে
    গেলো।কারণ বাড়িওয়ালা সবঘরের চাবি দিয়ে গেলেও স্টোর
    রুমের চাবিটা দেয় নি।
    মিস্ত্রীকে বাথরুমের রোগ সম্পর্কে বলে দেওয়ার পর
    মিস্ত্রী তার কাজে লেগে গেলেন।
    আমি ঠাঁই দাড়িয়ে থেকে মিস্ত্রীর কাজ দেখছি।
    বেশ নিপুণ হাতে তিনি দক্ষতার সাথে বাথরুমের লকড্ খুলে
    ফেললেন মিনিট দশেকের ভিতরে।
    -শীতকালে এমনডা হয় বুঝলেন দাদাবাবু ।
    কথাটা বলে বিজয়ীর হাসি নিয়ে তাকালেন মিস্ত্রী মশাই।
    -বাহ্ আপনি তো খুব দক্ষ হাতের কারিগর,এত কম সময়ে লকড্
    খুলে ফেললেন?
    -হ্ দাদাবাবু,আমার তো কামই এইডা।
    -হুম,তো আরেকটু কাজ করে দিতে হবে যে আপনাকে?
    -কন দাদাবাবু?
    -ঐযে ঐ রুমটার চাবি বানিয়ে দিতে হবে।
    -ওতো আমার বা হাতকা খেল দাদাবাবু।এই হাত লাগামু আর চাবি বানায়ে
    দিমু।
    কথাটা বলে মিস্ত্রী স্টোর রুমের চাবি বানানোর কাজে
    লেগে গেলেন।খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে একদম সুক্ষভাবে চাবি
    বানিয়ে হাতে দিয়ে বললেন,”এই লন দাদা।
    চাবিটা হাতে পেয়ে আমার খুশি দেখে কে?
    মিস্ত্রীকে তার পাওনা টাকা বুঝিয়ে দিলে সে হাসিমুখে বিদায়
    নিলো।
    এদিকে ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় হয়ে আসলে সবাই রেডি হলেও
    আমি মাথা ব্যথার অযুহাত দেখিয়ে বাসায় থেকে গেলাম।
    সবাই বাড়ি থেকে বার হয়ে গেছে কিছুক্ষণ পর স্টোর রুমের
    চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম।
    “ভিতরে পুরানো কিছু আসবাবপত্র ছাড়া আর কিছুই নেই।তাহলে
    গতকাল রাতের ঘটনাটা কি সত্যি আমার মনের ভুল ছিলো!
    একপ্রকার হতাশা নিয়ে যেই না স্টোর রুম থেকে বার হবো ঠিক
    তখনি চোখ পড়লো ভেঙ্গে পড়া আসবাব পত্রের নিচে।
    একটু আগে বেসিনের উপর দেখা পুতুলটা এখানে কিভাবে
    আসলো!
    ছুটে গিয়ে বেসিনের সামনে এসে দাড়ালাম।না্হ এখানে পুতুলটা
    নেই!সবকিছু কেমন যানি ঘোলাটে লাগছে।
    স্টোর রুমের ভিতরে তো আমিই প্রথম ঢুকেছি,তাহলে বাহির
    থেকে দরজা লকড্ করা থাকলে পুতুলটা ভিতরে আসলো
    কিভাবে?
    নাহ্ আর নিতে পারছি না,এইখানে থাকলে হয়তো আমি এসব ভাবতে
    ভাবতে পাগল হয়ে যাবো।
    রাহুলকে ফোন দিলাম,” তোদের আসতে কতক্ষণ লাগবে।
    -এইতো ঘন্টা খানেক,একাউন্টিং ক্লাসটা হয়ে গেলে চলে
    আসবো।কেন,কিছু বলবি?
    -নাহ্।আচ্ছা ঠিক আছে তোরা আয়।
    একা একা থাকলে হয়তো ওসব ভেবে ভেবে পাগল হয়ে
    যাবো।তাই পাশের স্টেশনে গিয়ে দাড়িয়ে রয়লাম।শতশত
    মানুষের ভিড় এখানে।সবাই তার নিজ গন্তব্যে যাওয়ার লক্ষ্যে
    চাতক পাখির মত চেয়ে আছে ট্রেন আশার অপেক্ষাতে।
    পাশের এক বই বিক্রেতার কাছ থেকে একটা বই নিয়ে বসে
    পড়লাম,যেভাবে হোক একঘন্টা আমাকে বইটা পড়ে কাটাতে
    হবে।
    ঝকঝক ঝকঝক শব্দ করে ট্রেন এসে থামলো প্লাট ফর্মে।
    দাড়িয়ে থাকা যাত্রীরা সবাই যে যার মত করে উঠে পড়তে
    লাগলো।
    বইটা হাতে ধরে স্টেশনের মানুষগুলোর কর্মকান্ড দেখছি।
    হঠাৎ করে চোখ আটকে গেলো ২০৩ নং কেবিনটার দিকে
    চোখ পড়তে।
    জানালার পাশের সিটে বসে আছে একটা মেয়ে।হ্যা এইটা আর
    কেউ না,গতকাল স্বপ্নে যাকে দেখেছিলাম গলায় ফাঁস দিয়ে
    ঝুলতে এইটা সেই মেয়েটা।ট্রেন গড়াতে শুরু করলো,আমি
    অবাক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি।
    হঠাৎ করে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে
    উঠলো।
    বইটা ফেলে রেখে ছুটতে লাগলাম ট্রেনের পিছু পিছু। কিন্তু
    ততোক্ষণে ট্রেন আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
    দুপুরের দিকে বাসায় ফিরলাম,সবাই তার নিজ নিজ জামা-কাপড় গোচগাছ
    করাতে ব্যস্ত।
    আমি হুট করে বলে উঠলাম,”আচ্ছা স্টোর রুমের ভিতরে কি
    এমন আছে,যে বাড়িওয়ালা বারবার স্টোর রুমের দিকে যেতে
    বারণ করছিলো?
    কথাটা শুনে রাহুল আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”কি আবার
    থাকবে,হয়তো পুরানো আসবাবপত্র।
    -তাহলে বাড়িওয়ালা বার বার নিষেধ কেন করছিলো?নিশ্চয়
    কোনো ঝামেলা আছে ঐ রুমটার ভিতরে।
    -সে যাই থাকুক,আজকে বিকেলের মিশন পাশের বাড়ি প্রবেশ
    করা।
    -কেন?
    -কেন আবার,দেখবো কি আছে।শুনেছি পুরানো বাড়ি
    গুলোতে নাকি অনেক কিছু থাকে।তুই যাবি আমাদের সাথে?
    সাতপাঁচ না ভেবে বললাম,”হ্যা যাবো।
    -তাহলে আমরা তিনজনে যাচ্ছি,ঠিক আছে।
    -তিনজন কেন?আর একজন কোথায় যাবে?
    -হৃদয় সালা তো একটা ভিতুর ডিম।
    ও বাড়িতে যাবো শুনে ভয় পেয়ে বলেছে,ওর নাকি খালা
    অসুস্থ্য।ও সেখানে যাবে।আর ওরে নিয়ে গিয়েও কিচ্ছু হবে
    না,অযথা পিছুটান থাকবে তখন।
    -আচ্ছা ঠিক আছে।
    দুপুরের খাওয়া শেষ করে একটু বিশ্রাম করার পর বেরিয়ে
    পড়লাম,তিনজনে।
    আমাদের ভাড়া বাড়িটার পিছন দিয়ে গেলে সর্টকাট।
    তাই বাড়ির প্রাচির টপকিয়ে বাগানে প্রবেশ করলাম।
    মনে হয় এদিকটাতে বিগত দশবছরে কোনো মানুষ আসে নি।
    ঝরে পড়া পাতার স্তুপ জমে হাটু অবধি উঁচা হয়ে আছে।
    সাবধানতার সহিত এগিয়ে যেতে লাগলাম তিনজন।কিন্তু বাড়ির ভিতরে
    ঢুকে তিনজনে হতাশ হলাম।
    এক পাল বাদুড়ের দল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না।
    বিকেলের দিকে একটু ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম।
    দেখি হৃদয় আগে হতে এসে ল্যাপটপে গেইমস খেলছে।
    রোজকার মতন রুটিন মাফিক সবকিছু করে,রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে
    বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর যে যার মত করে ঘুমিয়ে
    পড়লাম।
    আর ঝামেলাটা শুরু হলো তখন থকেে।
    গতরাতের মত আবারো কারো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসতে
    লাগলো।
    বিছানা ছেড়ে সাবধানতার সাথে চাবিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে
    স্টোর রুমের সামনে দাড়ালাম।
    “আজকেও ভিতরে কোনো একজন মহিলা কণ্ঠে করুণ সুরে
    কান্না করছে।ধিরেধিরে চাবিটা দিয়ে তালা খুলে ভিতরে গিয়ে
    বললাম,” কে,কে ওখানে?
    কথাটা বলেই মোবাইলের টর্চ অন করতেই দেখলাম,ঘরের
    এক কোণে কেউ চুপটি মেরে বসে আছে।আর তার সামনে
    একটা পুতুল ঘুরে ঘুরে নাচছে।
    পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,”কে আপনি?আর
    এখানেই বা কি করে?
    মেয়েটি কথার জবাব না দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে পুতুলটার নাচ
    দেখছে।
    আমি আরেকটু সাহস করে এগিয়ে গিয়ে মাথাতে হাত দিতেয়
    মেয়েটা মুখ তুলে তাকাতেয় শরিরের সব রক্ত নিমিষেই পানি
    হয়ে গেলো।
    মেয়েটার চোখ দুটি রক্তবর্ণ হয়ে আছে।মুখের মাংস গুলা
    যেন এইমাত্র খসে পড়বে।দাতগুলা কেমন যানি আলকাতরার মত
    কালো হয়ে বেরিয়ে এসেছে।
    কি বিশ্রী চেহারা।
    হাত-পা সমানে কাপতে শুরু করে দিছে আমার।
    মোবাইলটা ফেলে দিয়ে চিৎকার দিতেই জ্ঞানশুন্য হয়ে
    মেঝেতে পড়ে গেলাম।।।

    সকালে কারো পানির ছাটা পেয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে
    দেখলাম আমি বিছানাতে সুয়ে আছি।আর তিনপাশে তিন বন্ধু বসে
    আছে,সবার মুখেই চিন্তার লেশ জড়ানো।
    -তুই ঐ রুমে কি করতে গেছিলিস,আর রুমের চাবি পেলি
    কোথায়? (হাসান)
    আমতা আমতা করে জবাব দিলাম,”ঐ রুমের ভিতর থেকে একটা
    মেয়ে রোজ রাতে কান্না করে।তোদেরকে বললেও
    তো তোরা বিশ্বাস করিস নি,তাই আমি নিজ থেকে গতকাল
    মিস্ত্রীর কাছ থেকে চাবি বানিয়ে নিয়েছিলাম।
    আর রাতে যখন মেয়েটা কান্না করছিলো তখন তালা খুলে
    ভিতরে ঢুকেছিলাম।
    -তো কি দেখলি,দেখেছিস তো ঐ মেয়েটাকে?(হাসান)
    -দোস্ত তোরা বিশ্বাস কর,আমি গতকাল রাতে নিজের চোখে
    দেখেছি।
    একটা অল্প বয়সি মেয়ে আর একটা পুতুলকে।মেয়েটা স্টোর
    রুমের এক কোণে বসে ছিলো আর পুতুলটা ঘুরে ঘুরে
    নাচছিলো।
    -মেয়েটা খুব সুন্দর তাই না(রাহুল)
    -তোদের কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি,সত্যি গতরাতে আমি ঐ
    রুমের ভিতরে একটা মেয়েকে দেখেছি।
    মেয়ে বললে ভুল হবে,অশরীরী আত্মা ছিলো ঐটা।
    তার চোখ দুটো দিয়ে যেন আগ্নেয়গিরির মত আগুন ফুলকে
    বের হচ্ছিলো।
    পুরো মুখটা পচে গিয়ে মাংস গুলো খুলে খুলে পড়ছিলো।
    উফপপ কি বিশ্রী আর ভয়ংকর চেহারা।আমি ভাবতে পারছি না।
    -আমি আগেই বলেছিলাম এই বাড়িতে না উঠতে।চল না চলে যাই
    অন্যকোথাও।
    কথাগুলো বলেই হৃদয় কেঁদে দিলো ভয়ের চোটে।
    -আশিক তোরে কতবার করে নিষেধ করেছি,হরর মুভি দেখা বাদ
    দে।এসবকিছু তোর হরর মুভির সাইডইফেক্ট।রাত জেগে
    জেগে একা একা হরর মুভি দেখবি আর সেগুলো ভেবে
    সবসময় গন্ডগোল পাকাবি।এর আগের বারও এমনভাবে সবাইকে
    ভূতের ভয় দেখিয়েছিলিস।দেখ আগেও বলেছি আর এখনো
    বলছি ব্যাচেলারদের বাসা ভাড়া পেতে কতটা কষ্ট করতে হয়?
    এই বাড়িটা অনেক কষ্ট করে পেয়েছি।প্লীজ দোস্ত এমন
    করিস না।
    আর তোর যদি এ বাড়ি পছন্দ না হয়,তাহলে তুই যেতে পারিস।
    অযথা আমাদেরকে ভয় দেখিয়ে বাস্ত্রহারা করিস না।
    একদমে কথাগুলো বলে উঠে দাড়ালো হাসান।
    তারপর জানালার মুখে গিয়ে থমকে দাড়ালো।
    আমিও চুপ করে গেলাম।কারন ওদেরকে যত যাই বলি না কেন
    ওরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না।ভাববে বাড়ি চেঞ্জ করার ফন্দি
    আটছি।
    সবাই মিলে একসাথে সকালের খাবার খেয়ে ক্যাম্পাসে গেলাম।
    আমি কয়েকবার রাতের কথা বলতে গেলেও রাহুল আর হাসান
    প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছে।কিন্তু তাদেরকে কে বুঝাবে,ও
    বাড়িতে থাকা আমাদের জন্য রীতিমতো রিস্ক হয়ে যাচ্ছে। বলা
    যাই না কার সামনে হুট করে ঐ প্রেতাত্মাটা এসে হাজির হয়।
    ক্যাম্পাস থেকে ফিরে সারাবিকেল কাটলো দুশ্চিন্তাতে,জানি না
    আজকে রাতে আবার কি হতে চলেছে?
    বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো,সবাই নিজের কাজ নিয়ে
    ব্যস্ত,কিন্তু আমার মাথাতে গত দুদিন রাতের ঘটনাগুলো চক্রর
    কেটে বেড়াচ্ছে।
    রাতে সবাই খাবার খেয়ে যে যার মত সুয়ে পড়লো।কিন্তু
    আমাকে আজকে হাসানের বিছানাতে সুতে হয়ছে,আর হাসান
    আমার বিছানাতে।
    সুয়ে থেকে মোচড়ামোচড়ি করছি দেখে হাসান বলে
    উঠলো,”কিরে,ঘুমাবি না,নাকি আজকেও যাবি তোর ভূত জি এফ এর
    সাথে দেখা করতে?
    আমি কোনো কথা না বলে উল্টাপাশ ফিরে সুয়ে থাকলাম।
    রাহুল আর হৃদয় দুজনেই ঘুমাচ্ছে।নানারকম চিন্তাভাবনা মাথার ভিতরে
    ঘুরতে ঘুরতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানি না।
    হঠাৎ করে কারো ধাক্কা মারাতে তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম।
    দেখি হাসান পাশে বসে আছে,তার চোখেমুখে ভয় জড়ানো।
    বেশ কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,”দোস্ত তোর কথাই
    সত্যি।
    স্টোর রুমে কেউ একজন আছে!
    আমি তোর কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য,তোরা সবাই ঘুমিয়ে
    যাওয়ার পর আমি একা একা স্টোর রুমের বাইরে বসে ছিলাম।
    অনেকক্ষণ যাবৎ বসে থাকার পর,দেখি রুমের ভিতর
    থেকে,নারী কণ্ঠে কেউ একজন করুন সুরে কান্না করছে।
    -বলেছিলাম না,ঐ রুমে প্রেতাত্মা আছে,তোরা তো বিশ্বাস
    করিস নি আমার কথা।
    আমার কথা শুনে হাসান আর কিছু না বলে উঠে গিয়ে রুমের দরজা
    খুলে দিলো।
    শনশন করে বাতাস এসে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো।
    একমুহূর্তের জন্য শরিরে শিরশিরে অনুভব হলো আমার।
    বসে থেকে বলে উঠলাম,”জানালাটা বন্ধ করে দে,শীত
    লাগছে খু্ব।
    কিন্তু হাসান কোনো উত্তর না দিয়ে,চুপচাপ জানালার বাইরে তাকিয়ে
    রয়লো।
    আমি আবারো বললাম
    “কিরে জানালাটা বন্ধ করে দে,খুব শীত করছে।
    এবারো কোনো উত্তর দিলো নজ হাসান,তাই নিজ থেকে
    উঠে গিয়ে জানালাটা বন্ধ করতে গিয়ে বড়সড় একটা ধাক্কা
    খেলাম।
    অবয়বটা হাসানের হলেও,মাথাটা অন্যজনের।
    ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে বললাম,” হাসান কি হয়ছে তোর?
    আমার কথা শুনে হাসানের মুখ থেকে নারী কণ্ঠে কেউ
    একজন বলে উঠলো,কে হাসান?আমি রিয়া।তোদের সবাইকে
    মরতে হবে।তোরা আমার ঘুম ভাঙ্গিয়েছিস।
    বলেই ভয়ংকর ভাবে হাসতে লাগলো।
    আমি আর কোনো কথা না বলে,রাহুল আর হৃদয়কে ডেকে
    তুলে বললাম,”তাড়াতাড়ি উঠ,আমাদেরকে এখনি এখান থেকে
    পালাতে হবে।
    রাহুল ঘুমের ভিতরে বলতে লাগলো,”আরেকটু ঘুমাতে দে
    দোস্ত।
    -রাখ তোর ঘুম,বেঁচে থাকলে পরে ভালো করে ঘুমিয়ে নিস।
    হৃদয়,হাসানের ভয়ংকর রূপ দেখে তো ভয়ে কান্না করে দিলো।
    রাহুলকে ডেকে তুলে অবিলম্বে ঘর ছেড়ে বার হতে
    যাবো ঠিক তখনি সিড়ি ঘরের সামনে শাড়ি পরিহিতা কাউকে দেখে
    থমকে দাড়াঁলাম।
    ডান হাত দিয়ে কারো মুন্ডু চেপে ধরে রেখেছে সে।
    হাতে থাকা মোবাইলের টর্চ ফেলতেই বুকের ভিতরে ধক্
    করে উঠলো।হাসানের মাথাটা মেয়েরূপি প্রেতাম্মাটা তার হাতের
    পাঁচ আঙ্গুলের মাঝে চেপে ধরে রেখেছে।
    চোখ বেয়ে এখনো রক্ত পড়ছে মেঝেতে।
    হৃদয়ের হাতটা ধরে এক হেচকাটানে স্টোর রুমের পাশ দিয়ে
    সরু সিড়িটা বেয়ে নিচে নামতে শুরু করে দিলাম।
    -এই রাহুল কোথায়?
    হৃদয়ের কথা শুনে থমকে গিয়ে পিছু ফিরে তাকালাম।কিন্তু পিছনে
    রাহুল নেই!
    তাহলে কি রাহুলকেও প্রেতাত্মাটা শিকার করে নিয়েছে।
    পিছনের চিন্তা চেতনা ফেলে দিয়ে হৃদয়কে সাথে নিয়ে
    অন্ধ্যকার রাস্তা দিয়ে সোজা হাটছি।
    কোনরকমে স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাতে পারলেই হয়।
    চাঁদের আবছা আলোতে রাহুলকে দেখে দু’জনেই থমকে
    দাড়ালাম।
    -রাহুল তুই এখানে?(আমি)
    -হ্যাঁ।আমাকে ফেলে রেখেই চলে যাচ্ছিলি?(রাহুল)
    -এখন কোনো উত্তর দেওয়ার সময় না।চল এখান থেকে
    তাড়াতাড়ি।
    কথাটা বলে রাহুলের হাতটা ধরতে গিয়ে মনে হলো,তার হাতটা
    সবে মাত্র ডিপ ফ্রীজ থেকে বার করে আনা হয়েছে।
    -কিরে চল।
    বলেই টান দিতে গিয়ে চোখ আরো একবার কপালে উঠলো
    আমাদের।
    সদ্য ধরে রাখা হাতটা আমার মুঠোতে।আর রাহুল অদুরে দাড়িয়ে
    আছে।
    রাহুলের কাটা হাতটা আমার হাতটাকে যেন আষ্টেপৃষ্টে ধরে
    রাখছে।
    এক ঝটকায় রাহুলের হাতটা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে হৃদয়কে
    বলে উঠলাম।
    -হৃদয় ভাগ,ওরা রাহুলকেও মেরে ফেলেছে।
    বলেই দু’জনে এক দৌড়ে এসে স্টেশনে এসে থামলাম।
    স্টেশন তখন প্রায় মানব শুন্য।গুটি কয়েক মানুষ থাকলেও তারা সবাই
    চাদর মুড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।
    স্টেশন মাষ্টারের ঘরের সামনে থাকা ঘড়িটাতে একটাবার তাকিয়ে
    সময়টা দেখে নিলাম ভালো করে।
    দুটো ত্রিশ বাঁজে ঘড়িতে,
    তাহলে ভোর হতে এখনো দু ঘন্টার বেশি লাগবে।
    এতক্ষণ কিভাবে কাটাবো?
    -দোস্ত আমাদেরকেও মেরে ফেলবে তাই না বল।
    আমরাও বাঁচতে পারবো না রে?ঠিকি মেরে ফেলবে ঐ
    মেয়েটা।
    কি এমন ক্ষতি করেছি আমরা তার,যে এভাবে এক এক করে হত্যা
    করছে।আমি প্রথমেই নিষেধ করেছিলাম।তখন তো শুনিস নি।
    তখন আমার কথা শুনলে হয়তো আজ রাহুল আর হাসানকে এভাবে
    মরতে হতো না।
    হৃদয়ের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থেকে এদিক ওদিক
    তাকাতে লাগলাম।পুরো স্টেশনটা নিস্তব্দ হয়ে আছে।
    আমাদের দু’জনকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎই স্টেশন মাষ্টার তার
    ঘন্টা বাজিয়ে উঠলো।
    অদুর থেকে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ ভেসে আসছে।
    মিনিট কয়েকের ভিতরে স্টেশনটা হুট করেই জনমানবে পরিপূর্ণ
    হয়ে গেলো।
    ঠিক যেমনটা গতকাল স্টেশনে এসে দেখেছিলাম।
    সবাই দাড়িয়ে থেকে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে।
    সবকিছু যেন চোখের সামনে ঘটলেও দুঃস্বপ্নের মত মনে
    হচ্ছে।মিনিট পাচেকের ভিতরে ট্রেন এসে প্লাটফর্মে
    থামতেই যে যার মত করে ট্রেনে উঠে পড়তে লাগলো।
    ট্রেনটা যেহেতু উত্তরের দিকে যাবে সেহেতু আমাদের
    জন্য সুবিধায় হবে।
    কোনোরকম চিন্তা না করে ট্রেনে উঠে পড়লাম।
    ট্রেন তার নিজ গতিতে চলতে আরম্ভ করলো।গভির রাত মানব
    শুন্য রাস্তা পেয়ে ট্রেনটা যেন বিদ্যুতের গতিতে ছুটে
    চলছে সামনের দিকে।
    -উফপ হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।কিন্তু হাসান আর রাহুলের জন্য খুব খারাপ
    লাগছে।
    বলেই হৃদয় ভিতরে দিকে গেলো বসার জন্য।
    আমি দরজার মুখে দাড়িয়ে থেকে পিছনে ফেলে আসা
    বন্ধুত্বের স্মৃতিগুলা আওড়াচ্ছি।
    এমন সময় হৃদয় হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো,”আশিক আমরা আর
    বাঁচবো না।
    ট্রেনটাও একটা সাজানো ফাঁদ।
    ট্রেনের ভিতরে কোনো জিবিত মানুষ নেই।
    হৃদয়ের কথা শুনে ভিতরের দিকে চোখ দিতেই শরিরের সমস্ত
    লোম গুলো কেন যানি কাটা দিয়ে উঠলো।
    কারো চোখ খুবলিয়ে তোলা,কারো হাত নেই,কারো মাথা
    নেই,কেউ অর্ধেক শরির নিয়ে বসে আছে চেয়ারে।
    কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো,মৃত্যুপূরীতে দু’জন অর্ধমৃত
    যাত্রী বসে থেকে মরার প্রহর গুনছি।
    ট্রেনের ভিতরে থাকলে মুত্যু অবধারিত,আবার ট্রেন থেকে
    ঝাপ দিলেও মৃত্যু অনিবার্য।
    তবুও বুকে সাহস চেপে দু’জনেই ঝাপ দিলাম ট্রেন থেকে।
    চোখ খুলতেই দেখলাম কেউ একজন আমাদের দুজনের পা
    ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
    চাঁদের আলোতে বুঝতে বাকি রয়লো না,সামনে থাকা মানুষটা
    আর কেউ না।
    স্টোর রুমে আটকে থাকা প্রেতাম্মাটা।
    হৃদয়ের মুখটা থেতলে গেছে পাথরের উপরে ছিটকে
    পড়াতে।আমারো বাম পা টা অসহ্য যন্ত্রনাতে ফেটে পড়তে
    চায়ছে।
    অসহায় হয়ে করুনার স্বরে বললাম,”আমাকে ছেড়ে দিন!আমরা কি
    এমন ক্ষতি করেছি আপনার?
    প্রেতাম্মাটা কোনো কথা না বলে হিড়হিড় করে টানতে টানতে
    আবারো বাড়িটার ভিতরে নিয়ে এসে থামলো।
    পিঠটা অসহনীয় যন্ত্রনাতে ফেটে যাচ্ছে।
    আমার ক্রন্দনের সুর যেন তার কানে বিজয়ের ধ্বনি হয়ে
    বাঁজছে।
    তার ভয়ংকর হাসির শব্দ আমার কানকে বিদ্ধ করে তুললো।মনে
    হচ্ছে কানের পর্দা ফেটে রক্ত বার হয়ে আসতে চায়ছে।
    -প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন!
    -চুউউপপপ।
    মুখের উপর আঙ্গুল চেপে ধরে কথাটা বলে অপলক দৃষ্টিতে
    তাকিয়ে থেকে আবারো বললো,”দেখ তোর
    বন্ধুদেরকে।কি গভির ঘুমে ঘুমিয়ে আছে।
    -আমাদের দোষ কোথায়,আমরা তো শুধু এ বাড়িতে থাকতে
    চেয়েছি এর বেশি কিছু তো চায় নি।
    -নাহ্ তোরা এ বাড়িতে থাকতে পারবি না।
    এ বাড়িতে শুধু আমি আর আমার ছেলে থাকবো।
    -ছেলে!ছেলে কোথা থেকে আসলো?
    -আমার ছেলে,সে আছে এই ঘরেই আছে। পুরো বাড়ি
    জুড়ে তার বিচরণ।
    তোদের জন্য সে শান্তিতে খেলাও খেলতে পারে না।
    -আচ্ছা ঠিক আছে,আমরা এ বাড়ি ছেড়ে দিবো।
    কিন্তু আমার বন্ধুদেরকে আবার আগের মত জিবিত করে দিতে
    হবে।
    -সওদা করতে চাস তুই?
    -না,শুধু বন্ধুদেরকে বাঁচাতে চায়।
    -তাহলে এ বাড়ির মালিককে নিয়ে আসতে হবে তোকে?
    -কেন?
    -তাকে পেলে তোদেরকে যেতে দিবো।
    -কিন্তু তাকেই বা আমি মৃত্যুর পথে ঠেলে দিবো কি করে?
    -এটাই তার প্রাপ্য।তোমাদেরকে আমি ছেড়ে দিবো,যদি এই
    বাড়ির মালিককে নিয়ে আসতে পারো।
    -কিন্তু সে কি এমন করেছে,যে তাকে মারতে চায়ছেন?
    -তার জন্যই আমার ছেলে জন্মের আগেই মরে গেছে,আর
    তার সাথে আমিও।
    -মানে?
    -এ বাড়ির মালিক জসিমউদ্দিন এর একমাত্র মেয়ে।
    বাবা আমাকে এতোটাই ভালোবাসতো যে নিজের একমাত্র
    মেয়েকে চোখের আড়াঁল হওয়ার ভয়ে,শাহেদ নামের একটা
    ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেয়।যাকে তোমরা
    বর্তমানে মালিক হিসেবে জানো
    শাহেদ নাকি বাবার খুব বিশ্বস্ত ছিলো। আর সেই জন্য কোনো
    সন্দেহ ছাড়ায় তার হাতে তুলে দেয় আমাকে।
    কিন্তু সে ও সুযোগের ব্যবহার করেছিলো আমার সাথে।
    বাবা মারা যাওয়ার কয়েকমাসের ভিতরে তার আসল রূপ বার হয়ে
    আসে।নিত্যনতুন মেয়ে নিয়ে আসতো এখানে।আর রাত
    কাটাতো,আমি নিষেধ করতে গেলেই আমাকে বেধড়ক
    মারতো।
    তবুও সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছিলাম।
    শুধু আমার পেটে বাড়তে থাকা অনাগত শিশুটার দিকে তাকিয়ে
    থেকে।
    কিন্তু নরপশুটা আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটাকেও বাঁচতে
    দেয় নি।
    নয় মাসের অন্তসর্তাকালীন আমাকে স্টোর রুমে বন্দি করে
    রেখে দেয়।
    খাবারের অভাবে স্টোর রুমের ভিতরেই আমার ক্ষুধার্থ
    অবস্থাতে মৃত্যু হয়।
    রোজ একটু পানির জন্য আর্তনাদ করতাম,আর নরপশুটা আমার
    আর্তনাদ শুনে হাসতো।আর উপভোগ করতো।
    মরে যাওয়ার পরও কখনো আমার লাশটাকে একটা বারের জন্য
    দেখার প্রয়োজন মনে করে নি।
    তার মৃত্যুই পারে আমার আত্মাকে শান্তি দিতে।
    ভোরের দিকে রওনা দিলাম মালিকের ঠিকানাতে।
    বেলা দুপুর নাগাদ গিয়ে পৌছালাম।কিন্তু মালিকের কোনো পাত্তা
    পেলাম না।
    বাড়ির কেয়ারটেকারের কাছ থেকে জানতে পারলাম,নতুন একটা
    চিড়িয়াকে নিয়ে ঘুরতে গিছে।
    আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
    কিন্তু আমাকে তো যেভাবেই হোক তাকে নিয়ে ফিরতে
    হবে।তাই এদিক ওদিক ঘুরে সময় কাটালাম।
    সন্ধ্যার একটু আগে বাড়ি ফিরলে তাকে কোনরকমে বুঝিয়ে
    সুঝিয়ে ফিরে আসলাম।
    -কোথায় কি হয়ছে বলো?এতো জরুরি ভাবে ডেকে নিয়ে
    আসলে যে?
    -আপনার বাসায় কিছু প্যারানরমাল ঘটনা ঘটছে কিছুদিন থেকে।এই
    বাসাতে কিছু একটা আছে।
    -কি বলো এসব,কি থাকবে এখানে?
    -তাতো জানি না,বিশ্বাস না হলে আজকের রাতটা আমাদের সাথে
    কাটাতে পারেন।
    লোকটাও বেশ একগুয়ে,যার কারণে খুব একটা কষ্ট করতে
    হলো না।অল্পতেই থাকতে রাজি হয়ে গেলো।
    আর বন্ধুরা কোথায় জানতে চায়লে কোনোরকমে বুজিয়ে
    দিলাম।
    দু’জন দুটি রুমে সুয়ে আছি।আমার কোনোভাবেই ঘুম আসছে
    না,অপলক দৃষ্টিতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে রাত বারোটা বাজার
    অপেক্ষা করছি।
    ঘড়ির কাটাতে রাত বারোটা বাজাঁর সাথে সাথে স্টোর রুম থেকে
    কান্নার আওয়াজ বেরিয়ে আসতে লাগলো।
    রুম থেকে বার হয়ে দেখলাম,লোকটা আগে হতেই স্টোর
    রুমের দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে।
    মৃত্যু সন্নিকটে জেনেও মৃত্যুর পথে দাড়িয়ে থাকতে এই
    প্রথম কাউকে দেখছি আমি।
    লোকটার চোখে মুখে বেশ বিষন্নতার রেশ ছড়িয়ে আছে।
    ভিতস্থত ভরে চাবি দিয়ে লক খুলে স্টোর রুমের ভিতরে
    ঢুকে যাওয়ার সাথে সাথে ভিতর থেকে দরজাটা আটকে
    গেলো।
    লোকটা ভিতর থেকে বাঁচাও বাঁচাও করে আর্তনাদ করছে।
    হয়তো সেদিন ও ঐ মহিলাটি এমনিভাবে আর্তনাদ করেছিলো
    বাঁচার জন্য।
    কিছুক্ষণ পর লোকটার আর্তনাদ চার দেওয়ালের মাঝে চাপা পড়ে
    গেলে আলমারির ভিতর থেকে পরিচিতো তিনজনের কণ্ঠে হৈ
    হুল্লড় লেগে গেলো।
    তাড়তাড়ি গিয়ে আলমারি খুলে দিতেই দু তিনটা কিল ঘুষিও খেলাম।
    তাকিয়ে দেখি রাহুল,হাসান আর হৃদয় তিনজনে সুস্থ শরিরে দাড়িয়ে
    আছে।
    -আমাদেরকে আলমারিতে বন্দি করে রেখে কি করছিলিস
    হারামি,নিশ্চয় স্টোর রুমের নতুন জি এফের সাথে সাপ লুডু
    খেলছিলিস।
    আমি কোনো উত্তর না দিয়ে শুধু একটু হেসে দিয়ে
    বললাম,”আমাদেরকে যেতে হবে এখান থেকে।
    তোদের জন্য একটা নতুন বাড়ি ঠিক করেছি,একদম ক্যাম্পাসের
    পাশে।
    ভাড়াটাও একদম কম।
    বলেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিতে লাগলাম।
    ভোরের দিকে এ বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আবার নতুন বাড়িতে
    উঠবো।না জানি সেখানের স্টোর রুমটার ভিতরে আবার কি
    থাকবে?
    -বাড়িওয়ালাকে না বলে এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়াটা কি ঠিক
    হবে?(হাসান)
    -সমস্যা নেই,বাড়িওয়ালার সাথে আমার কথা হয়ছে।
    তার আর বাড়িভাড়া নিয়ে ওতো মাথা ব্যাথা নেই।
    কি বলেন?
    স্টোর রুমের পাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলাটা মুচকি হেসে আবারো
    অদৃশ্য হয়ে গেলো।
    -কিরে কাকে আপনি করে বলছিস?(রাহুল)
    -ওসব তোরা বুঝবি না।চল তাহলে নতুন বাড়িতে যাই।
    সমাপ্ত….

    তো আজকে এই পর্যন্তই । মানুষ মাত্রই ভুল হয় । তাই ভুল হলে ক্ষমা করে দিয়েন । আশা করি পোস্টটি সবার ভালো লেগেছে । কোনো কিছু না বুঝতে পারলে কমেন্টে জানান । আপনি চাইলে এই লিংক এ ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে join করতে পারেন । আর যেকোনো প্রয়োজনে ফেসবুকে  আমার সাথে যোগাযোগ করবেন । 
               
               



    The post ভৌতিক গল্প লাভাররা কোথায় ? নিয়ে নাও একটি অসাধারণ ভৌতিক গল্প appeared first on Trickbd.com.



    from Trickbd.com https://ift.tt/K5AHNE6
    via IFTTT

    No comments:

    Post a Comment

    Fashion

    Beauty

    Travel