হ্যাপি হরমোন বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়।
হাসতে ভুলে গেছেন? আগের মত আর সবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না? কাউকে নিজের মনে হচ্ছে না? সবকিছুতে মেজাজ খিটখিটে হচ্ছে? সবাইকে বিরক্ত লাগছে? কেউ আর আগের মত নেই, আপনাকে ভালোবাসে না, আপনি একা, এমন মনে হচ্ছে কি?
যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে ধরে নিন আপনার টেনশন, মানসিক চাপ এবং সময় ও পরিস্থিতি আপনার হ্যাপি হরমোন কে শুষে নিয়েছে। আর যে কারণে আপনি এত বেশি বোরিং ফিল করছেন, এত বেশি ইরিটেশন হচ্ছে আপনার।
তবে হ্যাঁ আরেকটা কথা হল, আপনারা হয়তো অনেকেই হ্যাপি হরমোন নামের সাথে খুব একটা পরিচিত নন। কি তাইতো?.
তো, চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই হ্যাপি হরমোন বাড়ানোর এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায়। সেইসাথে জেনে নেই হ্যাপি হরমোন কি?. হ্যাপি হরমোন আমাদের শরীরে কি কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে এবং আমাদের শরীরের জন্য এই হরমোন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যাপি হরমোন কি?.
আমাদের মেজাজ, অনুভূতি, ভালো লাগা নিয়ন্ত্রণ করে চারটি হরমোন। সেগুলো হলো
• ডোপামিন
• সেরোটনিন
• অক্সিটোসিন এবং
• এনডোরফিন
সেই সাথে আরো দুইটি হরমোন রয়েছে সেগুলো হল ইন্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন। আর এই প্রত্যেকটি হরমোন কে একত্রে বলা হয়ে থাকে হ্যাপি হরমোন। যা আমাদেরকে একজন হাসিখুশি প্রাণবন্ত মানুষ হিসেবে বাঁচতে সাহায্য করে। সেই সাথে মানসিক প্রশান্তিতে থাকতে দেয় এবং প্রাণ খুলে হাসার শক্তি যোগায়।
কিন্তু আমাদের শরীরে যদি এই হ্যাপি হরমোনের পরিমাণ সঠিক না থাকে সে ক্ষেত্রে দেখা দেয় নানা সমস্যা। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো
• কারণে অকারণে মেজাজ খারাপ হওয়া
• একাকীত্ব বোধ করা
• সবকিছুতেই বিরক্তি অনুভব হওয়া
• ঠিকঠাক ঘুম না হওয়া
• কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না হওয়া।
• একটা সময় নিজের মানুষগুলোকে একেবারে দূরের মনে হওয়া।
এক কথায়, আমাদের খারাপ থাকার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই হ্যাপি হরমোন, যদি এর নিঃসরণ সঠিক প্রক্রিয়ায় না ঘটে।
স্বাস্থ্য তথ্য ও ঔষধের মূল্য জানতে দেখুনঃ DoctLab
তাহলে এখন কথা হল সুস্থ থাকতে হলে, কি হ্যাপি হরমোন শরীরে বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব হবে?.
এর জন্য কি কোন মেডিসিন সেবন করার প্রয়োজন আছে নাকি প্রাকৃতিক উপায় যথেষ্ট?
হ্যাপি হরমোন বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায় কি কি
সত্যি বলতে যে কোন সমস্যার সমাধান যে মেডিসিনে মিলবে, এমনটা কিন্তু আশা করা নেহাত বোকামি। মেডিসিনের পাশাপাশি অবশ্যই একটা মানুষকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়, যা তাকে দিয়ে থাকে একটি সুস্থ সুন্দর স্বাভাবিক জীবন। আর তাই, হ্যাপি হরমোন বাড়ানোর জন্য একজন মানুষকে বেশ কিছু কাজ করতে হয়। আপনারা জানলে অবাক হবেন এই হরমোন নিঃসরণের জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না যদি সঠিকভাবে, সঠিক পদ্ধতিতে, সঠিক সময়ে নিজেদের জীবন সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেওয়া যায়।
এক কথায় আপনি যদি আপনার শরীরে হ্যাপি হরমোন বাড়াতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে যা যা করতে হবে।
১. প্রতিনিয়ত শরীর চর্চা
২. সব সময় হাসি খুশি থাকা
৩. সময়ে সময়ে নাচ গান নিয়ে মেতে থাকা
৪. শারীরিক পরিশ্রম করে ঘামা
৫. সৃজনশীল কাজকর্ম করা
৬. টেনশন মুক্ত থাকার চেষ্টা করা
৭. সব সময় পরিমিত ঘুমানোর চেষ্টা করা
৮. কাউকে জড়িয়ে ধরা
৯. পোষা প্রাণী লালন-পালন করা
১০. জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করা
১১. মাঝে মাঝে ফ্রেন্ড সার্কেলে যোগদান করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া
১২. প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো
১৩. মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া
১৪. নিয়মিত মেডিটেশন করা
১৫. মন খুলে কথা বলা
১৬. যৌন মিলন
১৭. সফলতা অর্জন
১৮. প্রেমে পড়া
১৯. নিজের পছন্দের কাজকর্ম করা
২০. মাঝে মাঝে সমবয়সীদের সঙ্গ ছেড়ে ছোটদের সাথে মেতে ওঠা।
২১.. এবং আপন মানুষদের সাথে মিলেমিশে থাকা ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর পাশাপাশি, কোন মানুষ যদি নিয়মিত ডার্ক চকলেট খায়, আবার ভিটামিন সি ও ডি পরিমান মত গ্রহণ করে, সেই সাথে রোদে সময় কাটায় তাহলেও সেই ব্যক্তির শরীরে হ্যাপি হরমোন বেড়ে যায়, যা তাকে হাসিখুশি প্রাণবন্ত থাকতে সহায়তা করে। মন থাকে আনন্দে, মেজাজ থাকে ফুরফুরে।
আশা করি এ কয়েকটি উপায় অবলম্বন করে একজন মানুষ খুব সহজেই তাদের শরীরে হ্যাপি হরমোনের প্রসার ঘটাতে পারে।
হ্যাপি হরমোন বাড়ানোর কলাকৌশল
এখন কথা হলো, এই উপায় গুলো অবলম্বন করলে সত্যিই কি দ্রুত ফল পাওয়া সম্ভব?. কারো মনে যদি এমন প্রশ্ন থেকে থাকে, তাহলে বলব হ্যাঁ অবশ্যই সম্ভব।
আমরা সবাই জানি সুস্থ দেহে সুন্দর মন। দেহ ভালো থাকলে মন ভালো থাকবে আবার মন ভালো থাকলে দেহ ভাল থাকবে। যেকোনো একটি যদি খারাপ থাকে তাহলে একজন মানুষ কখনোই সুস্থভাবে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে না।
আর এটা আমাদের সবার জানা একজন মানুষ তখন ভালো থাকে যখন সে তার পছন্দের কাজগুলো করে এবং শরীর সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করে।
আর তাছাড়াও যে সকল হরমোন আমাদের মেজাজ, হাসি আনন্দ খুশি কে নিয়ন্ত্রণ করে সেই পাঁচটি হরমোন যদি আমাদের শরীরে বাড়ানো যায় তাহলে আপনা আপনি আমরা হ্যাপি হরমোনের অধিকারী হব এবং আমাদের শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
জানলে অবাক হবেন, প্রেমে পড়লে ডোপামিন হরমোন বেড়ে যায়। একাধিক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, প্রেমে পড়ার কারণে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে সরাসরি ডোপামিন নিশ্রিত হয়। তাই বলে শুধু যে প্রেম করলেই এমনটা হয়ে থাকে তা নয়। পাশাপাশি আপনার পছন্দের কোন কাজ সম্পূর্ণ করলে, নিজের যত্ন নিলে এবং নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য সঠিক নিয়মে এগিয়ে চললেও একজন মানুষ খুব সহজেই প্রশান্তি লাভ করে এবং তাদের শরীরে ডোপামিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়।
অপরদিকে অক্সিটোসিন হরমোন বেড়ে যায় আলিঙ্গন বা চুমু খেলে। এজন্য এটিকে লাভ হরমোন বলা হয়ে থাকে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, সন্তান প্রসবের পর মা বাবা ও সন্তানদের বন্ধন তৈরিতে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে এই অক্সিটোসিন হরমোন। আর এই হরমোনের ওপর নির্ভর করেই একজন মানুষ একটা সম্পর্কের ওপর ভরসা করে। ব্যাপারটা দারুন তাই না?.
এবার আসা যাক সেরোটনীন হরমোনের কাছে। এটি মূলত মেজাজকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি ঘুম, হজম ক্ষমতা, শিক্ষা, ক্ষুধা, এমনকি শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেম সচল রাখতেও সেরোটোনিন হরমোন কাজ করে। আর এটা বৃদ্ধি পায় যদি সূর্যের আলোয় বা রোদে কিছু সময় কাটানো যায়, প্রকৃতির সংস্পর্শে আসা যায় এবং নিয়মিত যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন করা যায়।
তো আজকে এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
The post দেহের হরমোন বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়সমূহ appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/TEDXyNZ
via IFTTT
No comments:
Post a Comment